1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

গল্প• স্বপ্ন সে তো স্বপ্নই থাকে– শারদীয়া সাধু

• ছোটগল্প


স্বপ্ন সে তো স্বপ্নই থাকে 

শারদীয়া সাধু

চতুর্থ শ্রেণি



টাকার অভাবেই যে ওকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হলো, পেটের ভাত ই জোগাড় হতো না। তিন ছেলের এই বাবাকে যে আজ পেটের দোটানায় কলকারখানার শ্রমিক হতে হলো। অভাবের থাবায় ভুলে যেতে হলো নিজের সাজানো স্বপ্নকে। আজ আর কিছুই নেই, শুধু আছে পরিতক্ত সেই কথা, আর সেই আকাশ যে আজও ওকে হাতছানি দেয়, যে আজও ওকে বলে কই লিখলে না যে কবিতা, বললে না যে কথা আমার সঙ্গে।


অলঙ্করণ : বিশ্বজিৎ মণ্ডল


কাশের দিকে চোখ মেলে, বার বার যেন উড়ে যেতে চায় এই মনটা। ওই অদূর নীল আকাশের মাঝে যেখানে দিগন্ত উড়ে যেত মনের মতো পাখি হয়ে। সারাদিন কলকারখানায় ওই খট.. খট.. খট শব্দ আর কালির গন্ধের মধ্যে ও যেন দিগন্তের মন ওই দূরপানে চলে যায়। সারাদিন কেমন একটা মনমরা হয়ে থাকে ও। ছেলে বেলার কথা গুলো ওর মনে পড়ে যায় বার বার। সেই ফাঁকা বেঞ্চ গুলো যেন আজও ওকে হাতছানি দেয় ওই দূরের দেশ থেকে। ওর মনে পড়ে যায় ওর চার বন্ধু আকাশ, সুজন, নবীন, প্রভাত ওরা সবাই কেমন হারিয়ে গেছে। কারোর কোনো খোঁজ নেই। সেই শরৎ, সেই গ্রীষ্ম, সেই বরষা, সেই শীত, সেই বসন্ত সব চলে গেছে। সেই টিফিন ভাগ করে খাওয়া, সবাই মিলে আকাশ দেখা আজ আর নেই। সেই দিন গুলো ওর জীবন থেকে কবেই চলে গেছে। ও যখন স্কুলে পড়ত ও তখন পড়াশুনায় খুব ভাল ছিল। কি ভালো কবিতা লিখতো। দিগন্ত আজও কবিতা লেখে মনের পাতায়, কেউ সেই কবিতা পড়েনা। ও নিজেই সেই কবিতার লেখক আবার নিজেই সেই কবিতার পাঠক। পাঁচিলের উপর ওর সব বন্ধুরা  সবাই এক সঙ্গে জড়ো হতো। আর প্রতিদিনের সংবাদ যেন প্রতিটা বন্ধুর কাছে প্রতিটা বন্ধুই ছিল। যখন অন্তিমপর্বে সবাই বলতো আমি বড়ো হয়ে ডাক্তার হতে চাই, কেউ বা বলতো আমি পুলিশ হতে চাই, কেউ বা বলতো আমি উকিল হতে চাই। যখন দিগন্তের উত্তরের জন্য সবাই অপেক্ষা করতো, তখন একটাই উত্তর আসতো,আমি পাখি হতে চাই। ওই দূর আকাশের পানে উড়তে চাই এরোপ্লেন এ করে, আমি ক্যাপ্টেন হতে চাই। নইলে যে আকাশের সাথে ভাব ই জমবে না। দূর থেকে কি আর কথা বলা যায় তার সাথে? তার ওই বিচিত্র রূপ দেখে কি আর কবিতা লেখা যায় মনের খাতায় ? ওর এতো সুন্দর কথা শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে যেত। সবাই কিছুক্ষনের জন্য হলেও বাকরুদ্ধ শ্রোতা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। সেই দিন গুলো আজ চলে গেছে। তবে দিন গুলো চলে গেলেও কথাগুলো আজও দিগন্তের মনের মধ্যে গেঁথে আছে। এখনতো শুধু ওই কথাগুলোই ওর সঙ্গী হয়ে আছে। আরতো কেউ নেই। টাকার অভাবেই যে ওকে পড়াশোনা ছেড়ে দিতে হলো, পেটের ভাত ই জোগাড় হতো না। তিন ছেলের এই বাবাকে যে আজ পেটের দোটানায় কলকারখানার শ্রমিক হতে হলো। অভাবের থাবায় ভুলে যেতে হলো নিজের সাজানো স্বপ্নকে। আজ আর কিছুই নেই, শুধু আছে পরিতক্ত সেই কথা, আর সেই আকাশ যে আজও ওকে হাতছানি দেয়, যে আজও ওকে বলে কই লিখলে না যে কবিতা, বললে না যে কথা আমার সঙ্গে। দিগন্ত নিজেই এসব প্রশ্ন নিজেকে করে, আর নিজেই সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়। 


শারদীয়া সাধু



কিভাবে যে এই অভাব কেড়ে নিলো তার সব স্বপ্নকে, ভেঙে দিল তার সব ইচ্ছাগুলো কে। যেগুলোকে নিয়েই ওর মন সাজিয়েছিল একদিন। সেগুলো আজ ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কিন্তু কেন জানিনা বার বার সেই আকাশ  ওকে ডাকে, আকাশেরও যেন আজ মন খারাপ। আকাশও যেন ওর মন খারাপের তালে তাল দিয়ে বার বার বলে চলে, ওই কালো রাক্ষসের মতো থাবাটা যেমন তোমায় গ্রাস করেছে তেমন আমাকেও করেছে। কিন্তু তাও যে দিগন্তের কিছুই করার নেই। ও ভাবে যেন অভাবটা ঝড় আর ওর স্বপ্নগুলো কাঁচ, যাকে এক নিমেষের মধ্যে ভেঙে দেওয়া যায়। আবার কখনও কখনও ওর মনে হয় অভাবটা বোধহয় দমকা হাওয়া আর ওই মরীচিকার মতো ইচ্ছাটা যেন প্রদীপের শিখা। যার একটা তান্ডব সব কিছুকে নিভিয়ে দিতে পারে। ওর সব বন্ধুর স্বপ্নই পূরণ হয়েছে। শুধু ওর স্বপ্নদেখাটাই সার হয়েছে। ওর স্বপ্নটা আজ ও স্বপ্নই আছে।

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন