• অনুগল্প
অবগাহন
শ্রাবণী গুহ
ঝুঁকে পড়ে ম্যাথস করছিলো নীলা। অন্য দিকে ছোট্কা নিজের মোবাইলে কিছু দেখছিলো। হঠাৎ কি মনে হতে চোখ তুলে দেখে, ছোট্কা এক দৃষ্টিতে ওর বুকের দিকে তাকিয়ে।
লজ্জা পেয়েছিলো খুব। আড় চোখে নজর পড়েছিলো ছোট্কার মোবাইলে। একটা নোংরা ছবি একটা ন্যাংটোমেয়ে... চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
অলঙ্করণ : বিশ্বজিৎ মণ্ডল |
খট্ করে শব্দ হতেই নীলা চোখ খুলে তাকালো। আজও জানোয়ারটা ঢুকে এসেছে। পা টিপে টিপে নীলার বিছানার পাশে এসে দাঁড়ালো। নীলা ভয়ে চোখ বুজে ফেললো।
নোংরা হাতটা নীলার গায়ে হাত বোলাচ্ছে । আস্তে আস্তে হাতটা ঢুকে গেলো নীলার ফ্রকের ভেতর।শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো। হাতটা সরিয়ে দিতে চাইলো।আরো জোরে চেপে বসলো হাতটা।
উফফ !.. কি জোরে বুকটাকে মোচড়াচ্ছে। যন্ত্রণায় নীল হয়ে যেতে যেতে অস্ফূট আর্তনাদ করলো নীলা। "ছোটকা, প্লিজ ছেড়ে দাও.. আমার ব্যথা লাগছে"…।
আরো জোর বাড়লো। বাঁ হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে নীলার অন্তর্বাস খোলার চেষ্টা করলো। পিছলে গেলো নীলা বিছানায়।
এক ধাক্কা দিয়ে নীলাকে বিছানায় ফেলে নিজেকে প্রবেশ করালো জানোয়ারটা । সাথে হিস্ হিস্ আওয়াজ... "কাউকে যদি বলেছিস তাহলে কিন্তু..."
চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছিলো । নীলা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলো যন্ত্রনা।
এক সময় জানোয়ারটা তৃপ্তির নিঃশাস ফেলে ছেড়ে দিলো নীলাকে।একটা জঘন্য হাসি উপহার দিয়ে গেলো।
আজ প্রায় ছয় মাস হয়ে গেলো এই শুরু হয়েছে।
অথচ প্রথম, যখন বাবার খুড়তুতো ভাই কলকাতায় পড়তে এলো। কি ভালোই না ছিলো।নিজেই বললো "তুই আমায় ছোটকা বলে ডাকবি "।
ক্যাডবেরি চকলেট এনে দিতো।মা বরং বকাবকি করতো.. "অভ্যাস খারাপ করিস না শুভ.. তারপর চকলেট না আনলে কান্না কাটি করবে.."।
বেশ কাটলো এক বছর।
নীলা ফাইভ থেকে সিক্স এ উঠলো। সেকেন্ড হয়েছিলো ক্লাসে।ছোটকা ম্যাথস দেখিয়ে দিতো। ৯৯ পেয়েছিলো সেবার।
মা বলতো,"ভাগ্যিস তুই ম্যাথসটা দেখিস... তোর দাদাকে বলে তো কিছু লাভ নেই.. নিজের অফিস আর মোবাইল নিয়েই ব্যস্ত।"
সেদিন যে কি হলো।
ঝুঁকে পড়ে ম্যাথস করছিলো নীলা। অন্য দিকে ছোট্কা নিজের মোবাইলে কিছু দেখছিলো। হঠাৎ কি মনে হতে চোখ তুলে দেখে, ছোট্কা এক দৃষ্টিতে ওর বুকের দিকে তাকিয়ে।
লজ্জা পেয়েছিলো খুব। আড় চোখে নজর পড়েছিলো ছোট্কার মোবাইলে। একটা নোংরা ছবি একটা ন্যাংটোমেয়ে... চোখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।
নীলা থার্ড ক্লাসে ওঠার পরই আলাদা ঘরে শুতো। মা বলেছিলো, " আমরা তো পাশের ঘরে রইলাম.. দরজা বন্ধ করিস না... কিছু লাগলে ডাকবি"।
প্রথম প্রথম একটু ভয় ভয় করতো।মনে হতো কেউ যেন বিছানার তলায় লুকিয়ে আছে। একটু খুট আওয়াজ হলে ঘুম ভেঙে যেতো। আস্তে আস্তে অভ্যাস হয়ে গেলো।
সেই দিনের পর দু'দিন নীলা ম্যাথস্ করতে যায়নি।কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছিলো।
ছোটকা নিজে থেকেই ডাকলো। মা কে ও বললো.." কি গো বৌদি.. নীলা দু'দিন ধরে পড়তে আসছে না.. কি হলো?..'
মা-ই পাঠালো। এতো ভালোবাসে। নিজে থেকে ডাকছে।
নীলাও ভাবলো। হয়তো ওরই মনের ভুল।
নাহ ! ভুলটা ভাঙলো চার দিন পর।
আজও পষ্ট মনে আছে দিনটা।
বনি, ওর বেস্ট ফ্রেন্ড–এর জন্মদিন ছিলো। খুব মজা হৈ হুল্লোড় হয়ে ছিলো।এতো টায়ার্ড হয়ে পড়েছিলো, কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলো।
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো।মনে হলো কেউ যেন গায়ে হাত বোলাচ্ছে। ধর মর করে উঠে বসতেই কে যেন মুখটা চেপে ধরলো।
তাকিয়ে দেখে ছোটকা। কেমন যেন দেখাছিলো চোখ মুখ।
ফিসফিস করে বললো, " চুপ একদম.. একটা আওয়াজ নয়."
ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো নীলার.।ছোটকা জামা খুলে দিলো। সেই শুরু।
কতো বার চেষ্টা করেছে মাকে বলার। ভয়ে চুপ করে গেছে।
মার বোধহয় কিছু সন্দেহ হয়ে থাকবে। জিগ্যেস ও করেছিল, " কি হয়েছে সোনা? চোখ মুখ এমন দেখাচ্ছে কেন ? "
তবু বলা হয়ে ওঠেনি। কেউ যেন গলা টিপে ধরছিল। মা বিশ্বাস করবে তো ? মারবে না তো ?
তারপর তো ছয় মাস কেটে গেছে.।প্রতি মাসের চার থেকে পাঁচ দিন ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকে নীলা। বাকি দিন গুলো ভাবতে থাকে কি করে বাঁচাবে নিজেকে ।
ঠিক করে ফেলেছে নীলা। নিজের হাতে শাস্তি দেবে জানোয়ারটাকে। না.. ছোটকা বলতে ইচ্ছে করে না আর।
আজ রাতেও এলো চুপিচুপি শকুনের মতো। ধারালো নখ্ বসালো শরীরে। হিংস্র হায়নার মত দাঁত ডোবালো। মুখ বুকে রাখতেই আর দেরী করলো না। এই সুযোগ ।
দু'হাতে সজোরে বসিয়ে দিলো মাংস কাঁটার ছুরিটা ছোটকার পিঠের ওপর।
বিকেলে এনে লুকিয়ে রেখেছিলো বালিশের নিচে ।
বীভৎস চিৎকারে মা বাবার ঘরের লাইট জ্বলার শব্দ পেলো নীলা। দৌড়ে আসছেন।
জামাটা টেনে গা ঢাকলো নীলা । বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো । পেরেছে সে জানোয়ারটাকে শাস্তি দিতে । মুক্তি ! মুক্তি !
জানোয়ারটার.... না ছোটকুর নিথর শরীরটা এখনো নীলার শরীরের ওপর অর্ধ নগ্ন অবস্থায় । ফিনকি দিয়ে রক্তের ধারা ভিজিয়ে দিচ্ছে নীলাকে। প্রতিশোধের শোনিতে অবগাহন নীলার আজ ।
আলতো হাতে ধাক্কা মারলো নীলা।
শরীরটা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।