পশ্চিমবঙ্গ দলিত সাহিত্য অকাদেমি'র সাহিত্য সভা প্রসঙ্গে কবি-সাহিত্যিক গোবিন্দ পান্তির কিছু কথা
৩রা জানুয়ারী,২০২১,বনগাঁ (উঃ২৪ পরগণা) নীল দর্পণ মঞ্চে"দলিত সাহিত্য একাডেমী"কর্তৃক আয়োজিত মহতী অনুষ্ঠানে উপস্থিত দর্শক হিসেবে লব্ধ অভিজ্ঞতা।
সাধারণ দর্শক মাত্র। অনেক অনুষ্ঠানে থাকার সৌভাগ্য হয়েছে, কখনো সভাপতি, প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সাধারণ কবি হিসেবেও।আত্ম প্রচারের জন্যএ কথা উচ্চারণ করলাম না,দৃষ্টিভঙ্গীর ভিন্নতা সম্পর্কে ব্যতিক্রমীতা বোঝানোর জন্যেই এই বাক্যবন্ধ।
কবি-সাহিত্যিকরা সাধরণত নাকি নরম-পেলব মাটির ফসল এই অপবাদ চলমান,ব্যতিক্রম যে নেই এ কথা বলবো না তবে-
"স্বজন হারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবোই"
ক্বচিত-লক্ষিত।
ধারণা ছিলো এবারও যে ভাষণ,যে কবিতা শুনবো তা শব্দ পার্থক্যে,ব্যক্তিকণ্ঠের উচ্চারণ ভঙ্গীর তারতম্য সত্ত্বেও প্রায় সমগোত্রীয় হবে;ভুল ভাঙলো।
দলিত সাহিত্য অকাদেমি'র সভাপতি মনোরঞ্জন ব্যাপারী'র সঙ্গে বর্ষীয়ান কবি-সাহিত্যিক গোবিন্দ পান্তি |
সঞ্চালক আশিস হীরা মহাশয় মঞ্চে এলেন।ধুতি-পাঞ্জাবী শোভিত নিতান্ত বাঙালী হিসেবে।সাধারণত যা হয়--সঞ্চালকের নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার অগ্রণী ভূমিকা, মঞ্চে নাটকীয় পদচারণার কারিগরি, হাতের মুদ্রায় বিশিষ্ট জন প্রকাশের অপচেষ্টা কিছুই নেই--নিজেকে নয়,বিশিষ্টদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, বিনয়ী,বাকবৈদদ্ধে দীপ্তিমান এক সঞ্চালক আমার শ্রদ্ধা কাড়লেন প্রথম দর্শনেই।উদ্বোধনী সঙ্গীতকার, সভাপতি,প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, শ্রুতি নাটক উপস্থাপকদ্বয় সবাই দেখলাম প্রচলিত পথের গড্ডলিকা প্রবাহের বিপরীতে। তাঁদের(প্রায় প্রত্যেকেরই) ভাষণে,কবিতায় ফুল-পাখি-চাঁদ-জ্যোৎস্না-গদগদ প্রেম কিছুই নেই পরিবর্তে বঞ্চিত-শোষিত মানুষের ব্যথা-হাহাকার,নির্যাতিতের প্রতি বিত্তবানের নির্যাতন,তাদের অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাতের অভিনব ছলাকলা বর্তমান আর আমাকে সর্বাংশে উদ্দীপ্ত করলো তাঁদের প্রতিবাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ-সংকল্প। ভাষণে নেই বহুচর্চিত একঘেয়েমি বরং পরিবর্তে"চর্যাপদের" অবহেলিত নিম্নকোটির দুঃখ-জর্জর জীবন,আজো যার ধারাবাহিকতা অপরিবর্তনীয়। বক্তারা তাঁদের সংযম-সুন্দর বক্তব্য রাখলেন ইতিহাস-ধর্মশাস্ত্রের অজস্র উপস্থাপনে।ভালো লাগলো অন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ নয়,রুখে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নির্দেশনা। পৌগণ্ড-বিলাপ আর নয় সাহিত্য হবে সংগ্রামী চেতনার উদ্দীপন।
আমি ঋদ্ধ হলাম,মনে হয় সকলেই।সংকল্পিত-মনের অলিগলিতে এক প্রতিবাদ-মুখর নতুনের বার্তা নিয়ে ফিরে এলাম।
আমি নিজে কবিতাপ্রেমী,কবিতা লিখি গত শতকের ষাটের দশক থেকে,আজ নব্বই ছুঁই ছুঁই বয়সে সঙ্গীহীন হয়ে পড়েছিলাম।আমার লেখা কাব্যগ্রন্থ"গন্ধ ছোঁয়া রোদ্দুরে" ' অনুভব এখন' কবিতায় লিখেছিলাম --
"নিয়তাক্ষ যত অগ্নিকোণ,ঋজুতার যত রুষ্ট ভাষা
যন্ত্রণায় কেঁদে ওঠে চেতনার অবসান বোধে
উন্মুখ কবিতা জানি জন্ম দেবে নব অনুভব,
কবিতাকে যেতে হবে কষ্ট-ক্লান্ত মৃত্যু পরিশোধে।"
আমার বোধের সঙ্গী পেয়ে গেছি মনে হলো"দলিত সাহিত্য একাডেমী" অনুষ্ঠান থেকে।
আমি উদ্দীপ্ত, আমি উৎসাহিত।
গোবিন্দ পান্তি
সাহিত্যিক
গোবিন্দপুর,উত্তর ২৪পরগণা