1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি নন্দিতা পাল : সাহিত্য চেতনা

 কবি নন্দিতা পাল

কবি নন্দিতা পাল

বি নন্দিতা পাল, জন্ম উত্তরবঙ্গের সবুজে ঘেরা সেকালের সেই রাজার শহরে। পড়াশুনো করেছেন কলকাতার যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এম.বি.এ করেন মুম্বাইতে। দীর্ঘ বাইশ বছর  তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেছেন। দেশ-বিদেশ যেখানেই থেকেছেন লেখাই কবির সবসময়ের সঙ্গী।

মন খুঁজে বেড়ায় মানুষের মধ্যে গল্প গুলোকে, আর কল্পনার সুতোতে চেষ্টা করেন লেখার গাঁথনিতে গাঁথতে। ঘরের কোণ থেকে দূর প্রান্তরের মানুষের মাঝের সেই কথার বুননেই  এ কবির কবিতাগুচ্ছ।


 কবি নন্দিতা পাল-এর একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :


আয়না
  ***

বিকেলের পড়ন্ত আলোয় আয়নায় সাজা যায়,

মনেও আসে নি কোনোদিন। বরং যদি

সেই রোদটাকে হাতে ধরতে পারতাম, মনের আয়না

দিতাম খুলে। আলোর প্রতিফলনে কিছু কথা হত,

কিছু না হয় থাকতো নীরবে।


হৃদয় উজাড় করে গড়েছি যাদের তিলতিল,

উদাত্ত আকাশে উড়বে তাদের জয় ধ্বজা,

তাদের অন্তরে আমার আয়না ঝিনুক মাঝে লুকোনো।

আমি এক বিলম্বিত লয়ের সকালবেলা নিজ খেয়ালে

দেখেই বুঝবো এ কোন অনুরণন


ভালোবেসেছি যারে, সিন্ধু সভ্যতা থেকে আজ ও।

দুরূহ স্রোতে যে আমায় আগলে রেখেছে এক ঢাল হয়ে।

তার বুকে লুকোনো আমার আয়না চুনী দিয়ে ঢাকা,

তর্কের পাহাড় ভেঙে যেদিন আমি ক্লান্ত, নিশ্চুপে

আমি অমাবস্যায় তাকে শুধাবো আমার গোপন প্রশ্ন।



জীবন হাতের মুঠোয়
          ***


এই প্রেক্ষাপটে আর যাই হোক না কেন

জীবন এখন হাতের মুঠোয়।

ভীষণ লড়াই শক্ত মনে সামলাতে যদি

না পারো, নীরবে পথ ছেড়ে দিতে হবে

এটাই শর্ত। যাবার সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে

নয়, অগোচরে রাতের অন্ধকারে চুল্লীতে

 

তুমি রাজা হও বা পথের কাঙ্গালী,

শর্ত একই। সব দ্বিধা ছাড়িয়ে আমি

ভাবনা খুলে দিয়েছি গুটি থেকে প্রজাপতি

হয়ে উঠবার। জীবন হাতের মুঠোয় নিয়ে

বেলাতটে ঝিনুক কুড়িয়ে চলেছি নিরলস।

শেষ রেখাটা ছুঁয়ে ফেলার আগে নিজের

যতটুকু দেবার ছিল সেই তাড়াতে আমি

ঝর্ণার মত আজ এক ধারাতে।

 

 

রানী
***


প্রাসাদের দেওয়ালে স্থাপত্য, গর্বের ইতিহাস।

কূটনীতির চালে রাজ্য দেশে-বিদেশে সমাদৃত।

ঘোড়াশালে সারে-সারে পক্ষীরাজ, রাজার

ব্রাহ্ম মেয়ের বিয়েতে কথার শেষ নেই তখন।


প্রাঙ্গনে রাজকীয় উৎসব, সাগরদিঘীর

চারপাশে শহর সাজল দেওয়ালীর সাজে।

কিশোরী হলেন মহারানী সেই রাজপাটে,

রাজার ভাগ্য যেন আরো প্রস্ফুটিত গোলাপ।


রানী নিজের অন্দরমহল থেকে বেরলেন

দেশের মেয়েদের মনের কাছাকাছি। তাদের

কাছে পৌঁছে দিলেন আলাদীনের প্রদীপ

সেই শিক্ষার আলো। মনের সৌন্দর্যে

সেজে উঠল বিদ্যালয়। বাঁধন কাটিয়ে

ঘরের মেয়েরা সেই আলোতে আজ ও

উজ্জ্বল উদ্ভাসিত।



সন্ধ্যে ঘনায়
    ***


পুকরের পাড় ধরে গাছের মাথায় আলো

শেষ আদরে সেদিনের মত বিদায় নেয়।

প্রাণ ভরিয়ে ঢেউয়ের তালে সূর্য সমুদ্রের

পেছনে যেন বিশ্রাম নেয়। আকাশে এক কোণে

আবছা চাঁদ ধীরে ধীরে তার পূর্ণ বিকাশ।


 দিনের ক্লান্তি ছাড়িয়ে মন তখন ঘরে ফেরার

ইচ্ছেয়। ইতিহাস, মরু, পাহাড় পেরিয়ে কারো

বনলতা সেন বাস্তব হয়ে ওঠে। মরীচিকার

অন্তরালে কেউ ব্যস্ত ধ্বংসের গুটি সাজাতে।

রাতের হাতছানি কেউ বা আলিঙ্গনে

প্রশান্তির বার্তা গোছায় ভোরের আলোর জন্য।


আমি একা বসে কাল পুরুষের ঝলকানিতে,

ভালো মন্দের সহবাস তিল তিল দেখবার জন্য।



হেমন্ত
 ***


ছাতিমের থোকা থোকা ফুলে গাছ ভারী খুশি,

সকালের পাতায় পাতায় শিশিরের আলতো ছোঁয়া।

উত্তুরে হাওয়ায় মাঝে মাঝে শুকনো পাতার আওয়াজ,

হেমন্ত দরজায় দাঁড়িয়ে যেন শীতের অপেক্ষায়।


 ধানের খেতে হাওয়ার দোলা আনন্দের,

নতুন ফসলের সেজে উঠবার প্রস্তুতি।

হাজার তারায় আকাশের আজগুবি সব চিত্র-

দীপাবলীর প্রদীপে অন্ধকারের মাঝে সেই আলোর অনুভূতি।


 সকালের সাদা পদ্ম সন্ধ্যায় গোলাপী,

কোজাগরী চাঁদে কার মায়াবী আলাপ।

নদীতে ভাঁটার টানে বাউলের সুরের টান।

হৈমন্তী সন্ধ্যা সাজে কারো সাথে অনেকদিন পরে দেখা হবার।


 এত সাধের কাঞ্চনজঙ্ঘা যেন হাত বাড়ালেই,

লক্ষ্মী পেঁচা রান্নাঘরের চালে এক দু'বার।

দরজায় পায়ের শব্দ প্রতিক্ষণে তার আসবার,

একরাশ স্মৃতিতে মন দোর খুলে নতুনকে দেবার।



মেলবোর্ন
    ***


গাছেরা ঠাণ্ডা হাওয়ায় আরামে গল্পে ব্যস্ত।

আকাশ যেন ঘন নীল হয়ে আমার বড় কাছাকাছি।

সবুজ গালিচায় খেলার শব্দে উচ্ছ্বাস কলকল।

রঙ-বেরঙের ট্রামে মন উড়ুউড়ু।


সমুদ্রের ঢেউ আলিঙ্গনে বারবার, 

ছোট পেঙ্গুইনদের সাধের ঘর সামলানো। 

খামখেয়ালী হাওয়ায় ধোঁয়া ওঠা সকাল

শিরশির হাওয়ায় সন্ধ্যের জ্যাকেটে।


 খোলা আকাশের নীচে রঙ্গিন ভিক্টোরিয়া,

সুদূর প্রান্ত থেকে এসে কোলাহলে মেলা।

পসরা সাজিয়ে সারির পর সারি।


 অ্যাবরজিনিসের ইতিহাস সযত্নে ফ্রেমের পর ফ্রেম,

ক্যাঙ্গারু, কোয়ালার নির্ভয়ে ঘোরার প্রান্তর।

ভাগ্য তৈরির সেই সোনা ধরার দৌঁড়।

তোমার কোলে আজ সবচেয়ে সুখের ঘর।


 


স্বপ্ন ছুঁই ছুঁই
     ***


সেই থেকে স্বপ্নের সাজানো ঝুড়ি নিয়ে চলছি,

ঝুড়িতে এতো গাদাগাদি মাঝে-মাঝে হয়ে যায়,

কয়েকবার সবাইকে নামিয়ে ঝেড়ে মুছে আবার রাখলাম।

ফুরফুরে সেই দিন সেই ভিড় স্বপ্নের দিনগুলো।


 স্বপ্ন গুলো ঐ নীল আকাশ ছুঁতে চায়,

নদীর কাছে গেলে দূর দিগন্তে মন খুলে দেয়।

দূর প্রান্তরে স্বপ্ন গুলো মাটির গন্ধ পেতে নেমে আসে,

খোলা হাওয়ায় স্বপ্নের ঝুড়ি আর একটু ভারী যেন।

 

একসময় পা ছড়িয়ে ঝুড়িটা নামিয়ে কত গোনা-গুনতি,

তুমি ও বসলে আমার সাথে, অতি যত্নে হিসেব নিকেশ।

কিছু স্বপ্ন ভারী অভিমান, অনেকদিন ভুলেই গেছি তারে।

কেউ আবার হাত বাড়িয়ে আছে, যেন সেই আমার জন্য।

এককোণে দেখি আমার ছোট্ট বেলার সেই স্বপ্নটা,

একই আনন্দ, সেই হাসি তার মুখে। তুমি বললে,

ছুঁয়ে দেখো একে, সেই তোমার পরশ পাথর।


 

সে তো মেয়ে
     ***


এমন একটা বছর যায় না

চোখ বন্ধ করে ফেলতে হয় এক একটা

কামদুনি, নির্ভয়া, হাথরসে। বয়স যা হোক

সম্পর্ক যা হোক, চেনা হোক বা না হোক।

সে তো মেয়ে !


 অনেক কষ্টে ছেলে মানুষ, বুকে টানা সংসার।

ছেলে মায়ের স্বপ্নে একদিন আকাশ ছোঁয়,

ঘর আলো করে আসে বউয়ের কোলে লক্ষ্মী।

এক আকাশ ভরা তারায় আগলে রাখে তাকে।

সে তো মেয়ে।


 সারে সারে লোক ধুনুচি নাচের আসরে।

মানতের ঢেউ মায়ের কাছে নীরবে;

অসুরদমন করার জন্যে ভক্তের আকুল নিবেদন।

বিদায়ে সিঁদুর পড়াতে গিয়ে মাকে, চোখে জল কেন।

সে ও তো মেয়ে।



 শীত এলো বুঝি
         ***


শীতের আগমনীতে বোধহয় এই বৃষ্টির ঝরাপাতা,

শুকনো হাওয়ায় উত্তুরে হিমেলের অবার আনাগোনা।

তোমার দেওয়া বীণা খানি নিয়ে আমি এককোণে,

চারিদিকে ছটের পুণ্য তিথির সূর্যদেবের আরাধনা।


 সংসারের আবর্তনে আমি জড়িয়ে একটি একটি পাকে,

ভালোবাসার নিত্য নতুন ছন্দে অপূর্ব এক বিবর্তন;

খেজুর গুড়ের গন্ধে মন এখন মেতে,

রাতের বেলা বেহুলার যাত্রা পালা বাতাসে বারবার। 


 সিগন্যালের বাচ্চাগুলো গুটি সুটি মেরে কোথায় যেন।

হ্যালোজেনের আলোয় চিক্-চিক্ করে ল্যাম্পপোস্টের নীচে লোকটার চোখ।

পার্টির গ্লাসে ঝলকে ওঠে অচেনা তন্বীর হাসির বাহার।

শীত এলো বুঝি হিমালয় ছাড়িয়ে তোমার আমার। 


 

অন্তর মন
    ***


সে মনের খোঁজ পাইনি অনেকদিন

যে মন আমায় ভাবায়

আমায় উড়িয়ে নেয় সুদূরে

আমার ভাবনাগুলোকে গোছায়

যে মন আমায় মানুষ করে।


সে মনের খোঁজ পাইনি অনেকদিন

 এ মনের পথ চলা খেয়ালী

  ঠিকানা বদলায় অহরহ

ভাবুক এ মন, অগোছালী

ভীষণ নরম, কখনও দুর্বিসহ।


সে মনের খোঁজে নিজেই খুঁজি বহুদিন

 নদীর চলার বিন্যাসে এ মন     

 কখন ও কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার চূড়ায়

 হাসি কান্না ছাড়িয়ে হয়তো অভিমান

বুঝতে তারে দিন ফুরায়।


এ মনের অনেক রূপে মজেছে আমার মন

খুঁজেছি উত্তর কেন এসেছি

 কি ভাবেই বা পাবো তারে

এ মনে ডুব দিয়েছি

  বিস্ময়ে মন গিয়েছে ভরে


 তবু সে মনের খোঁজ পাইনি অনেকদিন

 মনের ভিতর সে অন্তর মন

নায়েগ্রার জলের প্রাসাদ দিয়ে ঢাকা     

তার জন্যে আমার মন উচাটন

তখন হবে তাঁর সাথে আমার ছবি আঁকা।


এ মনের খোঁজে চল রে পাগল মন ।

পাবো তারে তবেই জীবন উত্তরণ ।



Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন