1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি বৈজয়ন্ত রাহা | সাহিত্য চেতনা

 কবি  বৈজয়ন্ত রাহা

কবি বৈজয়ন্ত রাহা


বি বৈজয়ন্ত রাহা এই মুহূর্তে  বাংলার কবিতাপ্রেমী মানুষেরা সকলেই যাকে একডাকে চেনেন। বহু ছোট বড় পত্রিকায় লিখে চলেছেন গত ৩৫ বছরের অধিক। কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক,  ভ্রমণকাহিনি,  সব বিভাগেই অসংখ্য লেখা তাঁর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকত্তর করে কেন্দ্রীয় সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেন।


 জন্ম সুবর্ণরেখা নদীর তীরে, ঝাড়গ্রামে। " নদীর কবি" বলে বিখ্যাত। বহু কাব্যগ্রন্থ, গল্প সংকলন,  বিশ্ব সাহিত্যের অনুবাদ গ্রন্থ তাঁর কলম থেকে উৎসারিত। বহু পুরস্কারে বহুবার ভূষিত। প্রচার বিমুখ এই মানুষটি এখন ডুবে আছেন নিজের স্বপ্নের পত্রিকা " কবিতার আলো" এবং নিজের বাচিক সংগঠন " সুর শ্রুতি" নিয়ে। 

কবি বৈজয়ন্ত রাহা'র একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :


অনির্বাণ 

   ***


আমার ভিতর বহুবার জন্ম নাও তুমি।

জল স্বচ্ছ হলে ছায়ারা গভীর,

স্মৃতি স্বচ্ছ হলে, মায়ারা–

প্রাচীন দেওয়াল থেকে উঠে আসে গানের অতীত

কথাদের অস্ফুট শরীর –

জন্ম-ধুলো থেকে ভেসে আসে আলো,

দিনের মলাট খুলে দেখে নিই আবির্ভাব–

কিভাবে রেখেছো সে ঘুম,

কিভাবে সে মৌনতার অনুবাদ করো,

গোটা-গোটা অক্ষরে লিখে রাখো প্রতিশ্রুতিময় মৃত্যু-ইতিহাস ;


দিন যায়,


ক্রমাগত মুছে রাখি পৃথিবীর আবছা নদীর স্বর,

সন্ন্যাসীর মতো তাচ্ছিল্য আসে শীত নিয়ে,

অন্যজন্মে,

প্রার্থনার মতো গাছ,

পাখিদের মতো ঢেউ তোমার ভিতর মিলায়।


স্তব্ধতা দীর্ঘতম হলে

ভালোবাসা হেঁটে যায় অনন্তের পথে...

তুমি ভালো আছো ?




কবি-বংশ 

     ***


মুখ খুলে পড়ে গেলে, চারিপাশে শুধু ভয়াল মুখোশ ,

লাল নীল কালো,

তারা নিচু হয়ে রক্ত চেটে খায়,

মুখ থেকে মজ্জা-মাস-থুথু  ছুঁড়ে মারে,

হাত ধরে নিয়ে যায় দূর-সর্বনাশে, 

তলিয়ে যাবার আগে, খড়কুটো চেপে ধরি, প্রাণপনে,


সেসব, পাখিরা জানে না,

দেহের ভিতর থেকে গাছ বেড়ে ওঠে,

তার ডালে অনায়াসে ভেঙে পড়ে জ্যোৎস্নার গান, মুখোশের অদ্ভুত অভিনয় ,


পাখি এসে বসে মেঘের আকাশে,  

রাত্রি এলে ঘর বাঁধে পাপের ঘরণী

বিছানায় ঝড় ওঠে, ষড়রিপু ষড়যন্ত্রে বুঁদ, 

আংটি বদল দেখে

হিসেবের খাতা খুলে, হত্যা, কবিতা লেখে ,

কবির শরীর থেকে খুবলে নেয়, প্রেমের কিছুটা স্নেহ-বিজ্ঞাপন, 


ট্রেন ছেড়ে যায়

স্টেশনে স্টেশনে ভীড় রেখে, 

মুখোশেরা ধাওয়া করে, 

পুরোনো ভিক্ষার ঝুলি 

জলগাছে ঝুলে থাকে , 

ঝুলে থাকেবিবর্ণ মুখ, রক্ষা-মাদুলি। 



সেভাবে দেখিনি 

          ***


সেভাবে দেখিনি আমি


ঢেউয়ের মাথায় নাচা নিরালা আকুতি, 

তারাদের খসে পড়া মেঘের বাগানে 

এক একটি অতীতের স্মৃতি-শূন্যতা ,


জল থেকে উঠে আসা জলের মিছিল, অবয়বহীন,

জানলার ধার ধরে শব্দহীন রাতে নিভৃত নারীর মতো প্রেম,

জেগে থাকা গোপন কুসুম , নিবিড় পাখির মতো প্রতারণা,


দেখেও দেখিনি,


দু'পাশে আগুন ছিল, পুড়ে গেছে মধ্যবর্তী গান,

শিরায় শিরায় বয়ে গেছে শরীরের মাতাল কাহিনি,

ফিরে আসা হাওয়াদের ক্ষমা,  প্রসন্ন গোধুলি থেকে

তুলে আনা বিকেলের চূড়ান্ত বিশ্রাম, অক্ষর-লিপি,

চোখ থেকে হারিয়েছে দৃষ্টির অকালদর্শন ,


কতদূর ! দূর মানে কখনও নীরব, প্রতীক্ষার কাছে সরে আসা,

নির্মোহ আকাশ থেকে ঝড় খসে গেলে, 

ডালে-ডালে অন্তরীণ অযুত স্তব্ধতা

তাকে গিলে খায়–

জানলায় লেখা হয় অন্ধের আত্মজীবনী ,


সেভাবে দেখিনি,

যেভাবে তাকালে অলীক ভ্রমণ সেরে নারী, নদী হয়  ।



অযান্ত্রিক 

    ***


অপেক্ষানগরের দেওয়াল থেকে পড়ে নিচ্ছি পাখিদের মাতৃভাষা,

গাছেদের ওম,

পড়ে নিচ্ছি প্রাচীরের সুবর্ণবিষাদ,

তুলে নিচ্ছি দুইহাতে তোমার তাচ্ছিল্যমধুর,

হ্রদের জলের মতো শান্ত জলোচ্ছ্বাস...


শহরের পথে পথে প্রেম দেখো সন্ন্যাসীর মতো উদাসীন,

সুচেতা...

শীত আসছে,  ঠোঁট তুলবে না ?


হাহুতাশ সকাল যে বাস-টার্মিনাসে দাঁড়িয়ে

স্মৃতির কুয়াশা নিয়ে...



প্রতীক্ষা

   ***


সুন্দরের থেকে পরান্মুখ বিষ

ঠোঁটের দিকে ছুটে এলে

হে চুম্বন,

তাকে দিও শেষ কুর্নিশ...


সন্দেহ থেকে মায়াময় বিশ্বাস

পল্লবে পল্লবে ভিখারি বিন্দুর মত

অপেক্ষায় মদির হলে--


নির্জনে,

পাখিদের জন্মঘুম মিশুক...

হে প্রেম,

তাকে কোলে টেনো ,

পুরোনো প্রেমিকের মত বড় অসামান্য সে,

ভেবোনা নেহাতি কৌতুক...


সুন্দরের থেকে দূরে গেলে

রেখে যেও অনতিদূর,

আঁধারের দুইধার যাতে প্রতিমা হতে পারে,


তারপর,

সন্ন্যাসী হয়ো।

ততদিন

কষ্টঋণ...



মন্থন

 ***


ঝাপসা ঋষির মতো অবসন্ন নদীর কিনারে

দুই হাতে ধুলি মেখে প্রেম এসে বসে নতজানু,

কে যেন আলোদের গান আঁকে সৌধ মিনারে,

ফুলের কেশরগুলি ভেঙে ভেঙে অণু-পরমাণু...


ডানায় সাজিয়ে রেখে

জন্ম মাখে , মৃত্যু মাখে

আমাকেই  মেখে রাখে তোমার শরীর--

মাটিতে  এ ঠোঁট ছুঁই , গাঢ়স্বরে বলে উঠি 'তুমি',

ঢেউয়ে ঢেউয়ে পাড় ভাঙ্গে বিকেলের রোদভাঙ্গা তীর–

কেউ নেই আমি একা, রাত্রির স্তব জানে শুধু তটভূমি...




সত্য

 ***


দূর থেকে ছুঁড়ে দেওয়া চুম্বন

ছুঁয়ে যায় তোমার ঐ চিবুকের তিল

বাকি সবকিছু চূড়ান্ত অশ্লীল--


ধুলোধুসরিত মাছের বাজার, কাটাকপি, কুমড়ো ও টম্যাটো

কাঁচা সুড়কির পথ

ম্লান হয়ে আসা কোন এক কালের পৌরুষ

বাস্তুসাপ,

কাঁধে বাঁক, ছবি হয়ে আসা শবর না ভীল!!


ট্রেনের জানলা শুধু ধরে রাখে বিপথগমন

বালিকার কবুতর প্রেমে রুপোলি আবাসে সর্পিল গতি—

কাশবনে বুনোঝোপে সাদা হাঁস ছাড়ে,

নাকি সাদা হাঁস বৃষ্টি হয়ে মিশে যায় নিষিদ্ধ প্রণয়ে...

লাইন পেরিয়ে

সবুজ পাহাড়ে– উপত্যকায়—

চোখের পাতায় মাখামাখি হয়ে থাকে আকাশের সবটুকু নীল।


সিঁড়ি বেয়ে ওঠা-নামা জটিল গণিত

পথের ধুলোয় মিশে , কাদামাটি , ঝড় হয়ে

খণ্ড খণ্ড করে

কালো ঘর, সব কালো গ্রীল,

মাপে মাপে তেকোণা সকাল,

অর্থহীন পরমাণু জীভের ভিতর পুরে সোনারং মধ্য-দুপুর,

ট্রয়ের প্রাচীর ঘিরে নেমে আসা গোধুলির ভীড়—গ্রীক দেশে;


মাটির ভিতর থেকে উঠে আসে সিলুয়েট ফ্রেম—জলকণাহীন


কোন এক অলীক শৃঙ্গার—ট্রেনের কামরায়

চিবুকের নীচে ঐ একখানি তিল

যেনো হেরে যাওয়া কবিতার শেষ পংক্তিতে

অনিচ্ছুক বিপন্ন মিল।


আর সব কিছু আঝুড়ি বেসাতি— চূড়ান্ত অশ্লীল।।



কবিতা-চর্চা

      ***



ঘুম ভেঙ্গে গেলে অন্ধকার থেকে আলোয় জেগে উঠলাম।

ঘরের ভিতর কারা যেনো কথা বলছে...চুপচাপ স্বরে।

একজনের শরীর খুব আস্তে আস্তে শোয়ালো ওরা


তারপর,

একটা একটা করে শরীরের সব অংশ খুলতে শুরু করল।


আমি চেঁচিয়ে উঠলাম--" কী হচ্ছে টা কি?, কী হচ্ছে কি এখানে?"

ওরা বলল– "চুপ!, একটা কথাও না, এখান থেকে কেটে পড়োতো সোনা"...


কেউ খুলল হাত, কেউ খুলল পা, কেউ চোখটা খুবলে নিল, কেউ পাএর বুড়ো আঙুল, 

যেনো যন্ত্রের কলকব্জা...


আমার দমবন্ধ হয়ে এলো...


আমি কোনোক্রমে দরজা খুলে প্রানপণে দৌড়োতে শুরু করলাম।

লোকে জিজ্ঞাসা করলো, "কী হয়েছে? ওখানে কী হচ্ছে?"

আমি শুধু দৌড়োতে দৌড়োতে বললাম, "সংস্কৃতি ও কবিতা চর্চা"


তারপর, ভিড় থেকে ছিটকে অন্ধকারে, আলাদা হয়ে গেলাম,


একা।



তারপর ? 

   ***


তোমার হাতটা মুখের খুব কাছে এনে

মধ্যমায় ঠোঁট ছোঁয়াই নরম করে,

আর জন্মের প্রথম শুভক্ষণ উড়ে যায় অন্যজন্মের আকাশে,


তারপর?

কোনটা কবিতা কোনটা নয়

এই দোটানায় সারাদিন কেটে গেলে

পাহাড়ের খুব ধারে এসে জিজ্ঞাসা করি,

বলোতো, তোমার ভাল লেগেছে?


আর তারপর ?

ক্রমাগত না, না–এর পর না, তারপর আবার না,তারপর আবার....


পুড়তে-পুড়তে ঝলসে যেতে যেতে

মধ্য-দুপুরে মধ্য-সন্ধ্যায় মধ্যরাতে

অন্ধকারের দেওয়াল ভেঙে ফিরে আসি

শুধু তোমার জন্য...

 

তারপর ?

আসলে এই-ই আমার কবিতা...

শুধু তুমি।



সুজাতা

   ***


এখনও সঙ্গিনী হাওয়া ভেসে যাচ্ছে কষ্ট-পাওয়া চাঁদ,

এখনও সন্ন্যাসী পায়ে পায়ে হেঁটে যাচ্ছে দূর,

পৃথক ফাল্গুন তার মৃতবৎসা রক্তের স্বাদ,

অস্তরাগে জেনেছে সে মৃত্যুও প্রণয়বিধুর...


কে তুমি পায়েস হাতে নবজন্ম ভোর হয়ে এলে,

বহুদূর গৃহ থেকে ভেসে এল প্রাণের বিধান,

জ্যোৎস্নায় নীল পাখি অন্ধকারে চাঁদ হয়ে গেলে

কে তুমি বিভঙ্গে রাখো প্রেমের সে বাঁধভাঙ্গা টান,


মায়ার কপালে টিপ বুকে কেন পদ্মগন্ধ সাজ,

সন্ন্যাসী মানুষ হল ক্ষীণকোটি সাজানো সংসার,

তোমার শরীরে গন্ধ নদীর সে রোদ কারুকাজ,

বিদিশার ভগ্নতীরে সুজাতা কি নেবে তার ভার...?

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

2 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন