দুই বাংলার বর্ষসেরা কবি গোবিন্দ পান্তিকে নিয়ে বিতর্ক
সাহিত্য চেতনা ওয়েব ডেস্ক : পশ্চিমবঙ্গ তথা দুই বাংলার বর্ষসেরা ও জনপ্রিয় কবি গোবিন্দ পান্তির এক মন্তব্যে সাহিত্য মহলে বিরাট বিতর্কের সৃষ্টি হয় ।
কবি গোবিন্দ পান্তি গত ১০ই নভেম্বর 'সাহিত্য চেতনা'র ফেসবুক গ্রুপে এক মন্তব্য প্রকাশ করেন । যা নিয়ে এ বিতর্কের জন্ম । এদিন মন্তব্য করেন– "সাহিত্য চেতনার কথা অনেকের কথায় উঠে এসেছে। আমার মনে হয়েছে আমদের আশেপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো কিছু সংগঠন গজিয়ে উঠেছে, যাদের না আছে নিরপেক্ষতা না আছে দূরদৃষ্টি, না আছে মহৎ মানসিকতা শুধু উদ্দেশ্য সিদ্ধির অপকৌশল,এ দিয়ে আর যাই হোক সাহিত্য সেবা হয় না,হয় সাহিত্য সংকোচন। সাহিত্য চেতনাকে আমার আন্তরিক আশীর্বাদ জানালাম। আমার বিশ্বাস এ সংস্থা একদিন সাহিত্য জগতে আলোড়ন তুলবে।"
কবি গোবিন্দ পান্তি ''অনুরাগ' সাহিত্য সংস্থার মুখপত্র ও সম্পাদক । এতদ্বঞ্চলের মধ্যে প্রাচীন পত্রিকা হিসেবে যার খ্যাতি সর্বজন বিদিত । এদিন তাঁর 'ব্যাঙের ছাতা মতো গজিয়ে ওঠা' মন্তব্যের প্রতিবাদ করেন কিছু কবি-সাহিত্যিক ।
তাঁরই ''অনুরাগ' সাহিত্য সংস্থার সভাপতি সাইদুর রহমান কবির মন্তব্যের প্রেক্ষিতে এক বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেছেন ।
বিতর্ক প্রসঙ্গে ''অনুরাগ' পত্রিকার সহ সম্পাদক জয়ন্ত মন্ডল একটি চিঠি প্রকাশ করেন–
কিছু কিছু মানুষ সব ধরনের প্রসংশার ঊর্ধ্বে, আমাদের কবি গোবিন্দ পান্তি ঠিক তাই। 1992 সালে দুই বাংলার নির্বাচিত সেরা কবি, চোখ সম্মাননা প্রাপ্ত, জেলারত্ন এবং ভাষাবিদ শুদ্ধসত্ত্ব বসুর চোখে ভবিষ্যতের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আমাদের গর্ব নব্বই ছুঁই ছুঁই বয়সের সম্মানীয় কবি গোবিন্দ বাবু কোলকাতার বড় বড় পত্র-পত্রিকার আহ্বান ছেড়ে নিঃস্বার্থভাবে গ্রামে পড়ে থেকেছেন গ্রামের যুবক-যুবতীদের নিয়ে সাহিত্য সংগঠন গ'ড়ে তুলতে। তাঁর আত্মত্যাগ অবিকল্প এবং দৃষ্টান্ত স্বরূপ।
দুঃখের বিষয়, তাঁরই হাতে হাতেখড়ি দিয়ে তাঁরই কাছে পুষ্ট কিছু কবি-সাহিত্যিকরা বর্তমানে তাঁকে হেয় করতে দৃঢ়-সংকল্প। গোবিন্দ পান্তি শুধু নিজের কথা ভাবলে তারা সাহিত্যের পাশ দিয়ে হাঁটতো কি না সন্দেহ। এ ধরনের কিছু মানুষ আত্মপ্রচারের স্বার্থে নিজ সাহিত্য-পিতা স্বরূপ প্রৌঢ় কবিকে শুধু অস্বীকার করে চলেছে তাই নয়, অকারণে অপমান করতেও দ্বিধা করছে না। কিছু শিষ্যের এই নিদারুন প্রতিদান আমাদের কাছে চরম লজ্জার। এক পত্রিকার প্রশংসা করে তিনি যে কথা লিখেছেন তাতে কোনো দুরভিসন্ধি ছিলো না। অথচ তাঁরই হাতে দীর্ঘ 30-40বছর ধরে তালিম নেওয়া কিছু মানুষ যাদের তিনি বুকে বেঁধে রেখেছেন, আজ তারাই উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে তাঁকে আঘাত দিয়ে চলেছেন। আজ সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন সাহিত্য প্রেমী মানুষদের বিষয়টি দুঃখের সঙ্গে জানালাম।
গোবিন্দ বাবুর এ অপমানে অনুরাগের সহ:সম্পাদক হিসেবে গভীর ভাবে মর্মাহত আমি।
জয়ন্ত মণ্ডল
সভাপতি সাইদুর রহমানের বিরূপ মন্তব্যে সংস্থার মুখপত্র তথা কবি-সাহিত্যিক ও সম্পাদক গোবিন্দ পান্তি লেখেন –
সকলকে অবহিত করার জন্য আমার বক্তব্যের বিষয় জানাচ্ছি----
"সাহিত্য চেতনা" নামে একটি সাহিত্য সংস্থা বিথারীর উদীয়মান কবি জয়দেব বিশ্বাসের হাতে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আমি প্রায়৬০বছর ধরে গোবিন্দপুরের মতো অজ পাড়াগাঁয়ে নিজ উদ্যোগে সংগঠন তৈরি চালাচ্ছি,এখন অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীকে পেয়ে সংগঠন আরো মজবুত।কত বাধা -অসহযোগিতা সহ্য করেও শুধু সাহিত্যকে ভালোবেসে ব্যক্তিচিন্তা বিসর্জন দিয়ে সংস্থার মাধ্যমে তৈরি করেছি শত শত কবি,গল্পকার,ছড়াকার নাট্যকার ইত্যাদি। এখন তারা প্রতিষ্ঠিত
আমি দেখেছি কতো সংস্থা তৈরী হলো আর সঠিক প্রতিপালনের অভাবে অকালে নষ্ট হয়ে গেল তাই ওকে সাবধান করেছি। "ব্যাঙের ছাতার" অর্থ হঠাৎ গজিয়ে উঠে অকালে ধ্বংস হয়ে যাওয়া।আমি এই সংস্থার শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তাকে সাবধান করতেই পারি।এই শব্দবন্ধটি কি কারো বিরুদ্ধে গালি?
আমার অত্যন্ত প্রিয়,পুত্রতুল্য,অনুরাগের সভাপতি সাইদুর রহমান লিখেছে ---তারা আমার ছাতার তলায় স্থান পায়নি আমি নাকি তাদের অন্য ছাতার তলায় ঠেলে দিয়েছি। আমি বুঝতে পারছি না তার বা তার অনুগামী কাউকে কিভাবে কটুক্তি করলাম!সে হঠাৎ তাদের প্রতিনিধি হয়ে ফেচবুকে রেকর্ড রাখলো।তার সঙ্গে আমার আজো তো মধুর সম্পর্ক তাকে স্নেহ করে আব্বাজান বলি।যদি তার বা তার প্রিয় কোনো ব্যক্তির স্বার্থহানিকর কিছু বলে থাকি সে তো সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারতো।
ব্যাঙের ছাতার ব্যাখ্যা চাইলে আমি দিতে পারি। সাইদুরের প্রিয় কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার প্রতি আমার কোনো ঈর্ষা নেই। আমার যদি সৎ অভিপ্রায় না থাকতো তবে৬০ বছর ধরে ওদের পেছনে সময় দিতাম না।চোখের রঙিন চশমা পরে দেখলে জ্বলুনি মনে হতে পারে,স্বচ্ছ দৃষ্টিতে দেখলে সমাধান সহজে হতে পারে।
এভাবেই চলছে মন্তব্য ও তার পাল্টা মন্তব্য । তবে সাহিত্য প্রেমীরা আশাবাদী সমস্ত বিবাদ ভুলে এ প্রাচীন সংস্থা আবার সুস্থ সাহিত্য চর্চায় ফিরবে ।