দিদি
আশিসবরণ সামন্ত
***
দিদির সঙ্গে ঠিক দিদিরই মতো একটি সুন্দরী মেয়েকে বাড়িতে ঢুকতে দেখে অভিসিঞ্চন তার চোখের লাগাম টানতে পারেনি। সে ভাবে -দিদি কি তাহলে তার বুকের না-বলা ব্যথার টের পেয়েছে? দিদি সাগরিকা খাতুন এর সঙ্গে অভিসিঞ্চনের বয়সের তফাৎ দু-বছর মাত্র ।দিদি এ বছর বি.এস.সি পার্ট থ্রি দিয়েছে। খাঁটি একুশ। অভিসিঞ্চনের উনিশ।
সাগরিকা সরাসরি ডাইনিং রুমে নিয়ে গিয়ে বসায় নবাগতাকে। মা ও ভাইকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দেয় ।মা ,আমার বন্ধু নম্রতা মুখার্জি ।একসঙ্গে পড়তাম। বি.এস.সি পার্ট থ্রি পরীক্ষা হয়ে গেছে। এই সুযোগে এখানে দু-দিন থেকে কামারপুকুর ,জয়রামবাটি ও বিষ্ণুপুর ঘুরে দেখতে চায় ।নম্রতা ইনি আমার মা মনীষা ইয়াসমিন ।আর এইটি আমার ভাই অভিসিঞ্চন। বি.এস.সি পার্ট ওয়ান দিয়েছে ।খুবই ছটফটে ছেলে।
নম্রতা বলেন- অভিসিঞ্চন।
বা: ভাই -এর বেশ সুন্দর নাম তো! একটা জোয়ার খেলে যায় অভিসিঞ্চনের দেহে মনে -প্রানে ।সাগরিকার বাবা অভিজিৎ রহমান ব্যাঙ্কের অফিসার। থাকেন শিলিগুড়িতে। মাসে একবার বাড়ি আসেন ।ট্রেনেই যাতায়াত ।আরামবাগ থেকে মাসে একবার যাতায়াতও কষ্টকর। কী আর করা যাবে ! মা মনীষা ইয়াসমিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে থাকেন।
বসো মা ,কথা বলো আমি একটু আসি ।সন্ধ্যাবেলা অনেক কথা হবে। বলেই মা কিচেনের দিকে যান। এদিকে অভিসিঞ্চন তার ক্ষুধার্ত চোখদুটি থেকে দুটো লকলকে জিভ বের করে দিদির বন্ধুর আগাপাছতলা চেটে পুটে খায় । সে ভাবে -মানুষ এত সুন্দরী হতে পারে ।সুন্দরী বলে তার দিদির খুব নাম-ডাক -পরিচিতি ।এ যে দিদির থেকে হাজার গুন বেশি ।যেমন মিষ্টি মুখ -চোখ তেমনি চুলের বাহার। সালোয়ার কামিজের আড়ালে উত্তপ্ত যৌবন । মাথা ঘুরে যায় অভিসিঞ্চনের। সে উসখুস করে। ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস বইতে থাকে তার ।
ইয়ং ছেলেদের চোখের ভাষা উপলব্ধি করার মত বয়স হয়েছে নম্রতার। সে চোখে চোখ রেখে বন্ধুর ভাইকে বোঝাতে চেয়েছে সে তার দিদির বন্ধু।
মা আসেন। হাতের ট্রেতে বৈকালীন টিফিন। তিনজন একসঙ্গে খায়। মা বলেন-টিফিন করো,আমি চা নিয়ে আসি।
চা -টা খেয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয় নম্রতা। তারপর ডায়েরি কলম নিয়ে বসে পরের দিনের প্ল্যান প্রোগ্রাম ঠিক করে নিতে চায় ।সাগরিকা বলে-অভিসিঞ্চন সব জানে। ও তোকে কাল সকালে মোটর বাইকে করে কামারপুকুর জয়রামবাটি দেখিয়ে নিয়ে আসবে । রামকৃষ্ণদেবের মন্দির , মঠ ও মিশন অনেক কিছুই দেখার আছে।
কিরে অভি ঠিক তো?
খুশিতে টগবগ করে ফুটতে থাকে অভিসিঞ্চন। সে তো হাতে স্বর্গ পেয়ে গেল। সাগরিকা বলে- পরের দিন আমি নিজে তোকে বিষ্ণুপুর নিয়ে যাব। রাসমঞ্চ, ছিন্নমস্তা মন্দির ,মৃন্ময়ী মায়ের মন্দির, মদনমোহন মন্দির কত কী দেখার আছে।
আমি অনেকবার গিয়েছি। তোকে ভালই গাইড করতে পারব।
এদিকে নম্রতা একটি ছোট কাগজে কী যেন লিখে মোড়ক করে অভিসিঞ্চনের হাতে দেয়। অভিসিঞ্চন একটু ঘুরে আড়াল করে মোড়ক খুলে দেখে লেখা আছে 'দিদির বন্ধু দিদি-ই'।