কবি সরবত আলী মন্ডল |
কবি সরবত আলি মন্ডল
কবি সরবত আলি মণ্ডল জন্মগ্রহণ করেন উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত বালকী- গোবিন্দপুর গ্রামে । পিতা মরহুম মোকসেদ আলি মণ্ডল, মাতা ছফুরা বিবি।
কবির প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় শাঁড়াপুল সাধারণ পাঠাগার থেকে ১৯৮৯ সালে "নবাঙ্কুর" পত্রিকায়, কবিতা - "চাষা"। প্রথম প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ ২০১৩ সালে "স্মৃতি ছুঁয়ে যাই"। এই কাব্য গ্রন্থটি ক্ষীণকায় হলেও পল্লীর অকথিত রূপ ধরা পড়েছে বেশির ভাগ কবিতার মধ্যে। যা পাঠকের মনে দাগ কাটে। অতি সহজ সরল শব্দ চয়ন পরিলক্ষিত হয় প্রতিটি কবিতার মধ্যে।
দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ - "স্মৃতির সরণি বেয়ে" ২০২০ সালে প্রকাশ করেন কর্পোরেট পাবলিসিটি। গ্রন্থটির 'কথামুখ' লেখেন - নিখিল ভারত শিশু সাহিত্য সংসদের সম্পাদক- কবি আনসার উল্ হক সাহেব ও কবির কাব্য পিতা কবি গোবিন্দ পান্তি মহাশয়। গ্রন্থটির মধ্যে বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা ও প্রকৃতির রূপ মায়াময় আলোয় ভরে উঠেছে। কবিতার ছন্দ মাধুর্য, শ্বাশ্বত জলতরঙ্গধ্বনি আর শব্দ চয়ন মুগ্ধ করবে বোদ্ধা পাঠকের।
যে সমস্ত পত্র পত্রিকায় কবিতা, ছড়া, প্রবন্ধ, সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে (আনন্দবাজার পত্রিকা, কলম, গণশক্তি প্রভৃতি দৈনিক পত্রিকা), -জাগৃতি, অনুরাগ, অঞ্জস, নিখিল ভারত শিশু সাহিত্য সংসদ, আলোর ফুলকি, বাল্মীকি, ছোঁয়া, গোবরডাঙা বই মেলা - স্মরণিকা, যামিনী কথা, আলোর সন্ধানে প্রভৃতি।
নরেন্দ্রনাথ স্মৃতি পুরস্কার, "আলোর সন্ধানে সম্মাননা", "মধুমায়া কবিতা উৎসব" স্মারক সম্মান পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন ।
কবি সরবত আলি মন্ডলেরল একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল
স্মৃতির সরণি বেয়ে
***
দূরে গেছো ভেবে তুমি বিজয় উৎসবে মেতেছো-
ভাবছো স্বপ্নেরা ধসূর হয়েছে
আমার স্মৃতির পাতায়
তবে শুনে রাখো-
আমার স্তরীভূত মননে
আজও তুমি জীবন্ত -জীবাশ্ম
সোনালী প্রতিবিম্ব মেপে
আজও রূপালী ডানা মেলে
আমার সঞ্চিত অনুভূতিরা।
নেই যোগ-বিয়োগের খেলা
অথবা মান-অভিমানের পালা,
কালবৈশাখী হয়তো তছনছ করেনা আমার সময়কে,
তবে অনুরাগে রাঙাতে টুকরো টুকরো বসন্ত
আজও নেমে আসে
স্মৃতির সরণি বেয়ে ।
নারী
***
আমি চিরসবজু আমি রঙ বৈচিত্র্যে অনন্যা সূর্যের গুঁড়ো মেখে কখনো বনফুল
আবার চাঁদের কিরণ ছুঁয়ে মধুপের বন্যা,
প্রেমের বৈভবে আমিই শান্তির নীড়।
অথচ নারীত্ব আমার জন্মগত অপরাধ
তাই হাতে বংশ প্রদীপ জ্বলে না,
কত চাঁদ- তারা- নীহারিকার জন্মদাত্রী আমি
আমি নাকি চির সত্যের আলোক বর্তিকা!
তোমরা বলতে পারো
আর কতো দীপ্র হলে
আমার হাতে বংশ প্রদীপ জ্বলবে!
আমি প্রেম- শক্তি- সাহস;
পুরুষের জীবনী শক্তি,
আমার দৃষ্টিতে চাঁদ- জ্যোৎস্না রাখে
আমার আঁচলের ব্যজনে মেঘ বৃষ্টি ঝরায়,
আমি শীতের সোনা রোদ,
গ্রীষ্মের শীতল পাটি
আমাকে ছাড়া তোমাদের ইচ্ছেরা
মরুভূ মির মরীচিকা।
বিভূতি পরশ
***
বাংলা কথা সাহিত্যের স্বপ্ন আলোয়
তুমি গড়েছো বাক্যের মধুসারি।
পল্লীর অকথিত রূপ তুমি এঁকেছো প্রতিটি যৌবনের গন্ধে।
ভাসমান মেঘের কল্পনায় তুমি
দিয়েছো পাহাড়-জঙ্গল-সমভূমির শরৎ !
পল্লীর মমতা, শ্রম, দক্ষ কুশলতার
মাধুর্যে তোমার উপন্যাস চুম্বকীর টানে
কালের প্রভাবকে অতিক্রম করে আজ কালজয়ী সৃষ্টি।
নিসর্গ প্রকৃতি আধ্যাত্ম সাহিত্য
যেন ক্রীড়া সঙ্গিনী তাঁর নিসর্গ
যৌবন প্রেয়সীর কিম্বা বার্ধক্যের
বেঁচে থাকার আলোয়
থেমে না থাকার অনুভবের সাগর।
তুমি আছো কালের অকালে
মিশে না যাওয়া কোনো পরশ পাথর,
সকল প্রাণের উপরে আরাধ্য শক্তি একক।
পনুর্জন্ম
***
নিকষ অন্ধকার চারদিকে
ঝোপে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ,
দূরে মানুষের কথার গন্ধ
শুধু রক্ত রক্ত আর রক্ত।
ভেবে উঠতে পারছি না
সত্যিই কি বেঁচে আছি!
আমি এখন লাশকাটা ঘরে
কিছু লাশের
সাথে একাত্ম
কারা ছুরি চালাচ্ছে
বেহিসাবী এবং অনিয়ন্ত্রিত,
পা ধরে টানছে কারা!
আমার কাতর প্রার্থনা- আমি মরিনি,
আমি বাঁচতে চাই, আমাকে বাঁচতে দাও-
ছুঁয়োনা
***
যুগের সাধনায় জন্ম আমার বাঁওড় জলে
চেয়েছিলেন হতে লাল পদ্ম-
বেদনাকে ধারণ ক'রে হলাম নীলপদ্ম।
মোহময় দৃষ্টিতে যারা চেয়ে আছো,
ভেবোনা আমায় পাবে হাত বাড়ালেই।
হে প্রেমিক দল, যদি পেতে চাও আমার পরশ-
জল সাঁতরে পেরিয়ে এসো
বোঝো যন্ত্রনা কাঁটায় বিদ্ধ হয়ে।
প্রেম ! ভেবোনা সস্তা -
জন্ম আমার যেথায়, সেথায় হবো বিলীন।
তবু, প্রেমহীন পাষাণের হাতে দেব না ধরা,
আমি মরবো, পচবো, গায়ে জন্মাবে শ্যাওলা।
তবু ভেবোনা আমায় ছোঁয়া এত সহজ।
সূর্য কিরণের পাঁপড়ি মেলতেই
আমার সৌরভে ছুটবে - ভ্রমর
আবার ঘুমিয়ে পড়ি, চাঁদের স্নিগ্ধতার পরশে।
আমাকে জাতীয় সম্মান দেওয়া
এটা তোমাদের ভুল।
ভ্যালেন্টাইনের দিনে দিচ্ছো গোলাপ-
হাত বাড়ালেই পাওয়া সহজ বলে
প্রেম যদি সত্যিই সহজ হয়, তাই দাও।
আমায় ছুঁয়োনা..
নববর্ষ
***
নববর্ষ আশা আকাঙ্ক্ষার,
জীর্ণতা সজীবতার প্রতীক
সহজাত প্রবণতা,
পুরাতনের প্রতি অনিহা,
কিন্তু পুরাতন তো শুধু
অতীতের মাইল ফলক নয়।
নতুনের অভিষেকে তারই দৃঢ় অস্থি,
শতাব্দীর সে সরণি বেয়ে
নববর্ষের আশা।
যুগ পরম্পরায় নববর্ষ জ্ঞাপন
সে এক বৈচিত্র্য
শুভেচ্ছা-সদিচ্ছার সার্থকতায়
পরিবর্তন-অনিবার্যতায়
আড়ম্বরের মুখোশে
অন্তরের প্রীতি- প্রেম বিহত যন্ত্রনায়-
স্নিগ্ধ প্রদীপ জ্বলে না-
প্রাণের তুলসী মঞ্চে
তবু বেঁচে আছি, ক্ষীণতন্বী বঙ্গাব্দে
পয়লা বৈশাখে আর
রবীন্দ্রনাথ জন্ম আর তিরোধানে।
মা যখন বৃদ্ধা
***
প্রতি দিনের মতো বেরিয়েছি প্রাতঃভ্রমণে
পথ চলতে চলতে বাজার শেষে
পোড়ো দোকানের এক বারান্দা থেকে
মানুষের কাতর কান্না ভেসে এলো কানে,
থমকে দাঁড়িয়ে দেখলাম,
কনকনে পৌষের ঠাণ্ডায়
কাতরাচ্ছে এক বৃদ্ধা।
ঈর্ষা- বিদ্বেষ দূর করে
নিজেকে কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত করতে
চায়ের দোকানের গরম দুধ
তুলে ধরলাম মুখে।
শরীর গরম হতেই-
উৎসুক নয়নের চাহনি
মুখে ফুটলো কথা।
দেখলাম, আমারই বিদেশি চাকরিরত বন্ধুর মা।
বয়সের ভারে নোংরা হচ্ছে বাড়ি,
তাড়িয়ে দিয়েছে বৌমা।
জীবনের শেষ প্রান্তে
মা বড়ো অসহায়।
বুঝলাম, আভিজাত্য ঘরের মায়েরা
মা কেন বৃদ্ধাশ্রমে শেষ ঠিকানা।
জ্যোৎস্না হবো
***
শ্রাবণ ক্লান্ত ইচ্ছেরা
আজও রামধনু হয়,
আমার ভবঘুরে আকাশে-
মেঘ বালিকার গোপন ইশারায়
যখন বলাকারা আঁকিবুকি আঁকে
আমি তখন একফালি রোদ হ'য়ে
ছুঁতে চাই তোমাকে।
যদি কেউ ঢ'লে পড়ে মেঘের বুকে
না হয় আস্ত একটা রাত রেখো-
যেখানে জ্যোৎস্না হ'তে পারি মুর্হূমুহূ।
Tags:
আজকের কবি