1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

কবি বিকাশ দাস (মুম্বাই) | সাহিত্য চেতনা

কবি বিকাশ দাস (মুম্বাই)

 

কবি বিকাশ দাস 

কবি বিকাশ দাস জন্মগ্রহণ করেন ২৬ আগস্ট পশ্চিমবাংলার মালদা জেলায়। পিতা স্বর্গীয় বীরেন্দ্র কুমার দাস। মাতা স্বর্গীয়া সিন্ধু দাস।

প্রাথমিক শিক্ষা সাহেবগঞ্জ, ঝাড়খণ্ড। তারপর কলকাতা। পদার্থ বিজ্ঞানের স্নাতক হয়েও সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। অডিট / কমার্শিয়াল লজিস্টিক ম্যানেজমেন্ট  নিয়ে পড়াশোনা করেন।  যদিও ছেলেবেলার  নস্টালজিয়া সব লেখা বয়সের সঙ্গে ধরে রাখতে পারেননি ।  

ইদানীং আবার লেখা শুরু করেছেন নিত্য পুজো আর্চার মতো। দেশ বিদেশের বহু পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি হিন্দি এবং ইংরেজিতেও লেখালেখি করেন। বর্তমানে মুম্বাইতে বাস করেন। 

সব গ্রন্থে উনার সৃজনশীলতার পরিচয় রেখেছেন সাহিত্য জগতে। আসলে উনি একান্তভাবে বিশ্বাস করেন একদিন কবিতা হয়ে উঠবে সকলের বেঁচে থাকার একমাত্র হাতিয়ার। 


প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থঃ  

এখন আমি একা, জরায়ুজ, নিকুচি করেছে কবিতা, কবির শেষ পাতা, তবু ভালো দুঃখ দিও (গীতিকবিতা), জীর্ণ ব্যথার মুখবন্দী কথা (পকেট বুক), বিকাশ দাসের নির্বাচিত কবিতা, ঈশ্বর এবার খেটে খা, মৃত্যুর জন্য কবিতা দায়ী, কুমারী গর্ভকোষ (ই-বুক),বাছাই বিকাশ (ই-বুক), ছবিতে কবিতা (ই-বুক) 



কবি বিকাশ দাসের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল :



দু’টুকরো

    ***


শরীর ভেঙেছি 

ভাঙতে পারেনি অন্তরের সীমান্ত

উথাল পাথাল করে ছুঁয়ে আছি 

শুধু তোমার দু’চোখ জানতো। 


দুয়ার খোলা 

সব কিছু ছিলো এপার ওপার যতটুকু বাঁচার জন্য দরকার।  

আমার অসফলতা বেঁধেছো তোমার আলিঙ্গনতায় বারবার। 


একদিন 

এক উঠোন এক দেশ এক জান এক খিলানের উজার।  

কোন স্বার্থের অহংকার ভেঙে দু’টুকরো আজ দু’পার। 

দাঁড়িয়ে  অন্তরায় 

এক পারে তুমি... 

আর এক পারে আমি... 

খুলে অর্গল হৃদকুঞ্জ তোলপাড়।  



ঋণ

*** 


এ কেমন ঋণ দিলে, শোধ নিলে না যে? 

মোহান্ধ জীবন 

মাটি,  আকাশের ছায়া রোদ্দুর বৃষ্টির প্রপাত  

বাতাস,নদীর স্রোত আর ফুলের গন্ধ নিনাদ 

ঈশ্বর, মানুষের প্রণাম স্বাদ নিয়ে থাকার সাধ

দু’হাত মেখে... 


তৃষ্ণার স্নানে শুদ্ধ হয়েছি আমি 

যদি তোমার আঙুলে আঙুল ছুঁয়ে লিখতে পারি কবিতা 

দিনান্তে কুসুমের উসুমে ছড়িয়ে ভালোবাসার নিস্তব্ধতা। 

তবেই হয়তো ঋণ মুক্ত আমি।  



উস্কানি

  ***


চিঠি লেখো 

খামখেয়ালীর কথার কথা ভাসিয়ে  পাতায় 

কোন নিশীথের অন্ধকারে ভালোবাসার জ্বালায়

তোমার আঙুল পুড়েছিলো।  

দেওয়াল ঝোলা ক্যালেডারের   কোন পাতায় 

তোমার ছোঁয়ার মুখর ছিলো।  


চিঠি লেখো

কোন দুর্লভ লোভে, কোন ঋতুর ফুলের পল্লব ছিঁড়ে  

তোমার হাতে যত্ন মেখে ভালোবাসা উস্কানির ভিড়ে 

বুকের কষ্ট ধুয়ে আরও কষ্ট পেতে চেয়েছিলো।


চিঠি লেখো

কোন দুর্দিনে তোমার বুকে শুয়ে  

সুদিন দেখেছিলাম তোমায় ছুঁয়ে। 

 


 কবিতা

   *** 


আকাশ

সূর্য ছুঁয়ে দেখতে চায়।

চাঁদ ছুঁয়ে দেখতে চায়।


মাটি

রোদ ছুঁয়ে ছাইতে চায়।

জল  ছুঁয়ে নাইতে চায়। 


ভোর

সূর্য তুলে নিজের কাঁধে দিনমান পৃথিবীর প্রান্ত ঘুরে ঘুরে 

আলোর বোঝা বেচে ক্লান্তির বোঝা নিয়ে মাথায় ফিরে আসে দুয়ারে শেষে । 

রাত্রি 

চাঁদ গুঁজে খোঁপায়, বিছানা চাদরে বিছিয়ে অভিমানী সুরে 

সোহাগী আহ্লাদী রমণীর সমস্ত গৃহীসুখ বিলিয়ে যায় যেমন নদী সাগরে মেশে। 

 


আমার মৃত্যু হবে সেদিন

            ***


আমার মৃত্যু হবে সেদিন

দু’চোখ এড়িয়ে যাবে দূর্বার ডগায় শিশিরমুখ। 

ফুলের পাপড়ি ছিঁড়ে  খুঁজতে যাবে রমণসুখ । 


আমার মৃত্যু হবে সেদিন

ঘরবাড়ি ভোরের সকাল ছুঁতে পাখির শিসে

ভুলে যাবে দু’হাত মেতে।  

বৃষ্টি ফোঁটা তুলে মাটির মাধুর্য ধানের শীষে

ভুলে যাবে ভিজে যেতে। 

 

আমার মৃত্যু হবে সেদিন

শহুরে টাওয়ারের ঝুলবারান্দার রেলিং ধরে 

খুঁজতে যাবে গ্রাম্য আকাশ। 

মাথার বালিশে ঘুমের পিলের সৌন্দর্য ভরে 

ধরতে যাবে রম্য আভাস।  


আমার মৃত্যু হবে সেদিন

মায়ের হাতের স্বর্গ পায়ে ঠেলে পৌঁছে দিতে 

ছুটতে যাবে দূরের বৃদ্ধাশ্রমে। 

বেচেবুচে বাপের রক্তঘাম ব্যক্তিত্ব কিনে নিতে  

রেখে যাবে শ্বাপদ লজ্জাস্রমে। 


আমার মৃত্যু হবে সেদিন

উড়ে এলে একঝাঁক প্রজাপতি পাখা মেলে জ্যোৎস্নার

অন্ধকার শরীর আর উঠবে না জেগে খুলে দিতে দুয়ার।  


আমার আসা যাওয়ার দৌড় 

                ***


আমার আসা যাওয়ার দৌড়  তোমার ঘর প্রান্তরের সীমানা ধরে। 

ব্যস,ওই টুকু আমার জীবন পরিধির স্থান । বাকি সব গেছে মরে।  

ছুটে আসি 

তোমার বুকের ভেতর যতো দুঃখকষ্ট আছে,  ছুঁয়ে নিতে । 

নিঃশ্বাসের ভেতর নিঃশ্বাস ডুবিয়ে,   দুর্দিন গুছিয়ে দিতে। 

সেটা আমার অধিকার মেনে। আমার পাপবিদ্ধ হৃদয় শুদ্ধ হবে জেনে।  

আমি অতো বোকা নই যে গঙ্গার জল ছিটিয়ে, শুদ্ধ হয়েছি বলে নেবো মেনে ।


ছুটে আসি 

তোমার পায়ের নীচে অবান্তর ধুলো ঝড়ের কামনা 

গায়ে মেখে মুছিয়ে নিতে কিছুটা অস্বস্তির ভাবনা। 

সেটা আমার অবধারিত অধিকার মেনে। আমার পাপবিদ্ধ হৃদয় স্বস্তি পাবে জেনে। 


ছুটে আসি 

তোমার শরীরের আপাদমস্তক শুশ্রষার সুরভি যাপন  

দু’হাতে আগলে আকাশ মাটির কাঁথার ঋতুর তাপন   

সেটা আমার ঈশ্বর দাতার দান মেনে।  আমার পাপবিদ্ধ হৃদয় মুক্তি পাবে জেনে। 


ছুটে আসি 

তোমার চোখের তলায় কালি-ছিটানো সংস্রবের অন্ধকার 

দু’চোখে নিত্য মেখে ঘাস দূর্বায় আদুরে সহবাস গন্ধসার 

সেটা বেঁচে থাকার আশ্বাস মেনে। আমার পাপবিদ্ধ হৃদয় নিষ্পাপ হবে জেনে।   


আমি অতো বোকা নই যে গঙ্গার জলে ডুব দিয়ে,  হৃদয় শুদ্ধ  নেবো মেনে।

 

যখন ধরো হাত 

        ***


যখন তুমি ধরো হাত

বুঝেছি,শরীরে আছে প্রাণ। ধ্বংস নির্মাণ এক সমান। 

যখন তুমি ধরো হাত

বুঝেছি,বর্ষার ডুব অবাধ বন্যা। আদুরী রূপসী অনন্যা ।  

যখন তুমি ধরো হাত

বুঝেছি,জীবন পূর্ণতার শূন্যবাস। আনন্দ লগ্ন অধিবাস। 

যখন তুমি ধরো হাত

বুঝেছি, চোখের দেখায় পর্যটন। বুকভরা খুশির দর্পণ।  

যখন তুমি ধরো হাত

বুঝেছি, দোলে নিঃশ্বাস গভীরে। ভালোবাসার সমীরে। 

যখন তুমি ধরো হাত

বুঝেছি,সবুজ সুবাসে সুফলা ধরণী। শ্বাস প্রশ্বাসে ঘরণী।   

যখন তুমি ধরো হাত

বুঝেছি,স্পর্শের স্পর্শে নিশ্চুপতা। গন্ধময় স্বস্তির কবিতা। 

 


কবিতা মিথ্যে বলে

         ***


এই সবে মাত্র দেখে এলাম 

মুঠোখোলা আকাশ। আদুল দূর্বা ঘাস।  

গাছগাছালির আহ্লাদী নাচ। স্রোতস্বিনীর স্রোত বিলাস।    

খেটে খাওয়া মানুষের ঢল। মাঠ ঘাট। প্রকৃতির প্রাবর।

মাটির গভীর ভেঙে ভেঙে তুলে আনা অন্বিষ্ট পাথর । 


কষ্টে সৃষ্টে নির্বিশেষে 

ভোর রাতে শুনে শুনে কণ্ঠস্থ করে এলাম 

পাখির শিসে,ধানের শীষে, শীতের শিরীষে 

অরণ্যখোলা বাতাসের কণ্ঠে শব্দের প্রবঞ্ছপাঠ।

  

তুলে নিলাম আগ্রহে 

খেলাচ্ছলে নিপাট কোঁচায় নির্নিমেষে ছায়া মাথায়।  

বোধিবৃক্ষের দু’চোখের তলে  

একদিন নিবিড় উদ্ধৃতি গুছিয়ে কবিতা লিখবো বলে

উদ্বাস্তু জীবন ঘরবাঁধার সত্যিটুকু মিথ্যে সংসার বলে। 



কবির মৃত্যু নেই

        ***


আর কবিতা লিখে উঠতে পারিনা। 

তবু লেখার কলম একলা ছেড়ে যেতে পারিনা। 

যদিও নিঃশ্বাসের উচ্ছ্বাস বুকের পাঁজর ভেঙে শব্দেরা  

উদ্বাস্তু আঙুলের স্পর্শ নিতে আর উৎসাহী নয়। 

কবিতার খাঁচার ভেতর আকাশ তেমন নয় বলে...


এক এক করে শব্দেরা ঘর ছেড়ে চলে যায় 

নিজের নিজের মৌচাকের বাসিন্দায় 

গুঁজে অজস্র সখ্যতার শর্ত বালিশের তলায়। 


রোজ দু’বেলা শব্দ খুঁজে বেড়াই   ... 

এখানে সেখানে সাজোর বিলাসে। জ্যোৎস্নার আঁচে। 

প্রেয়সীর সহবাসের গন্ধে। সকালের অগোছালো বিছানায়।  

বাসি কাপড়ের কোঁচড়ে।ঘরদোরের ধুলোঝড়ে ।এঁটো বাসনে। 

উঠোনে পড়ে থাকা রোদের উত্তাপে। চায়ের চুমুকে। চুপ চুম্বনে।  

স্নানের নগ্নতায় । প্রণামের আঙুলে। সংকোচের  কাঁচে।

আড়ালে বুকভারি বারবনিতার দোরে। নির্বিশেষে ‘ইউজ মি’ ডাস্টবিনে।  


প্রকৃতির দু’হাত ছুঁয়ে যায় আমার কবিতার শেষ পাতা। 

রেখে যায় তার চোখের দৃষ্টির ছাপ। স্পর্শটুকুর অধিবাস।  

নিঃশব্দতার নির্নিমেষ কোলাহলে জানিয়ে যায় দুর্দিনে  

দুর্যোগে প্রতিবাদী হও। না হলে তোমার একদিন সর্বনাশ। 

 

বৃষ্টি এসে ধুয়ে যায় কথার নিমিষহারা সোহাগ। 

কবিতা সুখে আছে। জীবনের আরো কিছু খোয়াক মেনে। 

আমি আজও শব্দ খুঁজে বেড়াই  কবির মৃত্যু নেই জেনে। 

 


রাগ অনুরাগ

       ***


জেনে রাখিস 

তুই না এলে আমার জীবনে 

তোকে কুড়োতে হবে কলঙ্ক জীবনভর।

জেনে রাখিস 

তুই না এলে আমার জীবনে 

আন্তরিক ভালোবাসার গহনে 

করতে আমার দিনগুলো আরো আখর । 

তোকে কুড়োতে হবে কলঙ্ক জীবনভর।


আমাকে যতই দুঃখ দহন জ্বালা দিস; 

আমার ভালোবাসা আড়ালে কুচলে দিস;

ঝগড়াঝাঁটি মাথায় তুলে

ভালো মন্দর খবর খুলে 

বাদ বিবাদ অপরাধ ভুলে 

আলোকবর্ষ পার করে তবু তোকে আসতে হবে  

সচ্ছলতার জিভে নিঃস্বার্থ নিঃশ্বাসে বলতে হবে 

তোকে ভালোবেসে তোর সাথেই বাঁধবো ঘর। 

তোর লজ্জাশীল হাতের অঞ্জলি  

কতটা দিয়ে গেছে জলাঞ্জলি 

পাষাণ হৃদয়ের সহ্য পাতায় দুঃখ রেখে  

গুছিয়ে নিয়েছে সুখ; রাগআনুরাগ মেখে।    



শুধু তোমাকে ভালোবেসেছি

               ***


তুমি জানো।

আমি কোনদিন তোমাকে ছুঁয়ে দেখেনি। 

ছুঁয়ে নেবার সুযোগ নিতে পারিনি, বলতে পারো। 

তোমার পাশে শুয়ে থাকার কথাতো ছেড়েই দিচ্ছি। 

হোঁচট গিলে তোমার অনেক কাছে এসেছিলাম।   

তোমার শরীরের সুবাসে বহুবার বেসামাল হয়েছিলাম। 

তোমাকে ‘ভালোবাসি’ বলতে গিয়ে ঠোঁট নাড়াতে পারিনি। 

বুকের কুণ্ডে গলার স্বর শুকিয়ে অশঙ্খ হয়েছিলো।  

বিশ্বাস করো। মাটির দিব্যি দিয়ে বলছি । 

তোমার ঈশ্বরকে জিজ্ঞেস করো। শুনেছি ঈশ্বর আদৌ মিথ্যে বলেনা। 


আমার একখানা ঘুপচি ঘর। হাওয়া বাতাস না ঢোকার মতো।   

বুঝি, পাখির বাসা এর চেয়ে ঢের ভালো। 

সূর্যোদয় সূর্যাস্তের আধোদূর আলোয় কতোটা বাস; ঘরবাড়ি

উলসে ভালোবাসার নির্জনতাপ ভালো। 


তোমার আসার আহ্লাদের গন্ধে 

দীর্ঘরাত বুকের ভেতর নিস্তব্ধ রঙবাহারি তুবড়ি জ্বালিয়ে 

দু’চোখ উল্লাসে তোমার দিকে ছুঁড়ে দিয়েছি জন্মের মতো 

অবিরল বিশ্বাসে। 

নিজের ছায়ার মধ্যে শরীর গড়িয়ে নিচ্ছি 

এতদিনের একতরফা ভালোবাসার মৌচাক

অন্ধকারের জরুলে জেগে আছে। আলিঙ্গনের মতো ভোরের সকাল;

কল্পনার চৌচির ঘরে।  


আমি ভ্রমের সজলতায় 

বয়স ধরে ধরে বেঁচে থাকার উচ্ছ্বাস কুড়িয়ে নিয়েছি। 

বয়স বাড়ে উচ্ছ্বাস বাড়ে। 

তোমাকে জড়িয়ে ধরার ছিটকিনি খুলে 

বুকে মধ্যে নতুন ধরার ঝনৎকারে আত্নহারা আছি।

তোমার রূপ রঙের পরাগে জীবনের পরিধি মেখেছি। 

দৃশ্যপিপাসু শীতের শাক সব্জির বুকভারি সবুজ হাসির 

ফাঁসিকাঠে মরতে চেয়েছি।  

অভিমানে যতো দূর গেছি 

তোমাকে আমার বুকের হৃৎপিণ্ডে বেঁধে নিয়ে গেছি। 


নিচুমুখে সিঁড়িমুখে বসে আছি।   

এখন আর সিঁড়ি ভেঙে ছাদে যাওয়ার সাহস কুলোয় না।

নড়ে চরে ধপাস শরীর আর খোলা আকাশ দেখতে পাইনা।  

খাটে শুয়ে শুয়ে যতোটুকু আকাশ দেখা যায় বৃষ্টির শীতে 

তোমার উত্তাপ ভোগ করেছি।


অন্ধকার নামলে পায়ের নীচে, রাতে অবৈধ জ্বর আসে। 

নিঃশ্বাস কমে আসে।  দু’চোখের দৃষ্টি ফুরিয়ে আসে। 

শরীর ক্রমশ শবের দিকে নুয়ে পড়ে মৃত্যুর আঠা ধরে।  

আমার ঈশ্বর জানে।  

আমি জন্ম নিয়েছিলাম শুধু তোমার জন্য।

তোমার আদল ছুঁয়ে বেঁচে থাকার আনন্দবিলাস 

শতাব্দীর কৈশোর যৌবন বয়সী বেঁধে অধিকার।


শুধু তোমার জন্য। 

আমি বেঁচেছিলাম শরীরে তোমাকে ভালোবেসে। 

শরীরে মৃত্যু জড়িয়ে যাবো তোমাকে ভালোবেসে।  


বিশ্বাস করো। আগুনের দিব্যি দিয়ে বলছি । 

তোমার ঈশ্বরকে তলব করে জানতে পারো।  নিশ্চয় বলবেন।

আমার চিতার আগুন চিতিয়ে কতটা সত্যির আলোর ফুলকি ধরেছি।

কতটা তোমাকে ভালোবেসে আমার জীবন এপাশ ওপাশ করেছি।  

 

কবিতার সৃষ্টি

      ***


ভোর লগ্ন উঠোন তুলসিপাতার শয়ন তুলে

তুমি 

আমার ঠোঁটে আঙুলের স্পর্শমেখে; বলতে 

জানো? ‘এই আকাশ আমার’ । আমি শুধু তোমাকে দেখতাম।  

কাজলপোড়া সূর্যডোবা সাঁঝের নিবিড়ে  

তুমি 

আমার হাত তোমার হাতে রেখে;  বলতে 

জানো? ‘এই পদ্মচাঁদ আমার’। আমি শুধু তোমাকে দেখতাম।  

মাটির সুবাসে মৃন্ময়ী বাতাস বিবস্ত্র হলে 

তুমি  

আলোর আঁচের লহমা আমার গা জড়িয়ে; বলতে

জানো?

‘এই শিশিরস্নাত ফুলগুলো আমার’। আমি শুধু তোমাকে দেখতাম।  

দহনোন্মুখ শয্যার আলিঙ্গনোৎসব উর্বশী রাতে 

তুমি 

সমস্ত চুলের বোঝা নামিয়ে আমার বুকে; বলতে  

জানো? ‘এই গোটা জগত আমার’। আমি শুধু তোমাকে দেখতাম।  

শরীরের কোলাহল আগলে প্রকৃতির নিঃশ্বাসে 

তুমি 

তোমার স্তনের বোটায় আমার দেখার দ্যুতি বসিয়ে; বলতে 

জানো? ‘তুমি একান্ত আমার’।আমি শুধু তোমাকে  দেখতাম।    

গাছের ভেতর গাছ; পাতার লাবণ্যে সর্বস্ব বেঁধে  

উত্তাপের শীত দু’চোখের জলের লোনায় কবিতার সৃষ্টি । 


 

শুধু একবার ছুঁয়ে নিও

           ***


আমাকে শুধু একবার ছুঁয়ে নিও 

কাটিয়ে নেবো সমস্ত জীবন; আনন্দের বিন্দু বৃত্ত করে।


আমাকে শুধু একবার ছুঁয়ে নিও 

সারিয়ে নেবো সব দীনতার আঁচড়; সততার হাত ধরে।  


আমাকে শুধু একবার ছুঁয়ে নিও 

মাখিয়ে দেবো মায়ের ভাষা; সন্ততির জিভ এক করে। 


আমাকে শুধু একবার ছুঁয়ে নিও

ভাসিয়ে নেবো জীবন অমৃতে;ঈশ্বরের মাথা নিচু করে।  

 

আমাকে শুধু একবার ছুঁয়ে নিও

তাড়িয়ে দেবো জাতপাত; ধর্মের চোদ্দগুষ্টি এক করে।  


আমাকে শুধু একবার ছুঁয়ে নিও 

নাড়িয়ে দেবো ভূগোলের সীমানা; নতুন বিশ্বদেশ গড়ে। 



দুয়ার দিই না ঘরে

          ***


দুয়ার দিই না ঘরে 

যখন তখন সে আসতে পারে বলে ঘরে। 

এই প্রত্যাশা ধরে 

‘সময়’ অন্তিম বেলা মাটিতে পড়বে ঝরে।


প্রতীক্ষার অন্তরালে 

আমি আজ পর্যন্ত কত কোয়া মাটি কেটেছি, 

জানিনা। 

মাটির হিমপাতাল কতটা নদী হয়ে উঠেছে, 

জানিনা।  

পদ্মপাতার উলঙ্গতায় কতটা স্বচ্ছতা মেখেছি, 

জানিনা। 


আমার নিদ্রার নিবিড়ে এসে   

আমাকে পুরুষ করে যাবে সে 

শয্যার আবর্তে সংসারী করে যাবে সে

সহধর্মিণীর মর্যাদার আরশির স্পর্শে 

রেখে যাবে তার বাম স্তনে সন্তান সন্ততির আবদার 

দক্ষিন স্তনে আকাশ ব্যাপ্তি আমার একান্ত অধিকার।



অরুণিমা

   ***


অরুণিমা 

আমার দুঃখগুলো 

ভোরের মতো বুক জুড়িয়ে যায় শুয়ে তোমার পাশে 

ঘুমের সুযোগ দুর্যোগ ভেঙে  না আসে শ্বাস প্রশ্বাসে। 

যে ভাবে সেঁকে ফুলকো রুটি্র  গরম ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাই 

রাতের জলসায় জেগে জেগে ঘরবাড়ি জ্বলে পুড়ে ছাই 

শরীরের সুবাসের তিমিরে আকাশ পোড়া গন্ধ পাই  

সমুদ্র মুঠোয় ধরে চিরদিন আমি শুধু তোমাকে চাই।

এমনি করে ঘুরে যাবো।

ভুল করে   ঢুকে যাবো। 

ধুলো ঝড়ের মুখে  নিবিড় আমোদে দুঃখগুলো সারাতে।   


মৃত্যুর জন্য কবিতা দায়ী

             ***


থেমে গেছে বৃষ্টির ছলকানি 

থেমে গেছে আকাশের গোঙানি 

তবু তুমি আসোনি আকবর চাচার চায়ের দোকানে। 

ধ্বসে গেছে মাটির আত্মগ্লানি 

ধ্বসে গেছে বসতবাড়ির ঝলকানি 

তবু তুমি আসোনি শেষবিদায় দেখে নিতে শ্মশানে। 


কার শব রেখে চুল্লিতে ধরে আছো উছলান 

আগুনের সেঁক লেগে বেঁচে ওঠে মৃত্যুর প্রাণ। 


প্রকৃতির হৃদকমলে থাক ধর্মজাত যার যার 

এইটুকু পৃথিবী সবার সমান সমান অধিকার। 


কবির আঙুল জানে বেঁধে নিতে কবিতায় নিশ্চুপ কথার ঝংকার 

মৃত্যুর জন্য কবিতা দায়ী অবিমৃশ্য হাড় হৃদয়ের নিরর্থ অহংকার। 





Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন