1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

আজকের কবি মন্দিরা ঘোষ | সাহিত্য চেতনা

কবি মন্দিরা ঘোষ

কবি মন্দিরা ঘোষ


বি মন্দিরা ঘোষের জন্ম পূর্ব বর্ধমানের  কালিকাপুরে এক সম্ভ্রান্ত  পরিবারে। সাহিত্য আবহে বেড়ে ওঠা। কলেজ জীবনে কবিতার চর্চা থাকলেও সিরিয়াস লেখালেখির ভাবনা শূন্য দশক থেকে। বাণিজ্যিক পত্রপত্রিকা লিটিল ম্যাগাজিন ও ওয়েব ম্যাগাজিনে  নিয়মিত  লিখে থাকেন।

বিবাহসূত্রে হাওড়ার শিবপুরে বাড়ি । তিনটি কাব্যগ্রন্থ রয়েছে। জ্যোৎস্নাশরীরের ছবি, মিশুক শব্দের মলাট  এবং অম্বালিকার কিশোরীগন্ধ।{alertSuccess}


কবি মন্দিরা ঘোষের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশ করা হল : 

{tocify} $title={সূচীপত্র}

মাটি


১.

এতো  যে কান্না আঁকো

এতো যে শ্মশান আগুন

সকালও থমকে দ্যাখো অনাথ চোখে 


সকলই নিতে পারো যদি

এ আঁধারও শুষে নাও তবে


২.

গর্ভ ছুঁয়ে  দ্যাখো

শোকপর্বে ছেয়ে আছে ভ্রূণ 

রক্তে অনর্গল জ্বরের ভাষা

চাপা যন্ত্রণায় প্রসুতির চৌকাঠ


প্রজাপতির পাখায় আহত মেঘের ছবি

আবাদের মাঠে বিকলাঙ্গ উন্মেষ 

কীভাবে ঢাকবে  তুমি ফসলবিকার  


৩.

তোমার খনিজ বুকে এতো যে বিষের ছোবল

এত যে মিছিল মানুষ

অগুনতি নগ্ন পায়ে ঝম ঝম খিদের নূপুর 


কোথায় লুকোবে আকাশ ! 

কোথায় জুড়োবে জল !


যে টুকু বেঁচেছে তোমার

সে তো আঁধারেরই নাম, আঁধারপ্রনয় ! 



ছবি


রোদ আর ছায়ার মাঝের ফাঁক থেকে

উঠে আসছে 

হতাশ সকালের মুখ


টুকরো টুকরো মানুষ 

ছায়ারা হাঁটু মুড়ে আছে অন্ধকারে 

নৌকোঘরে কোনো ভোর আঁকা নেই  


গাছের অনুভূমিক ডালপালা

ডুবে যাচ্ছে গ্রীষ্মের আগুন নাভিতে

ফুলের শরীরে সংগীত  নেই আর


অদূরে  নতজানু পৃথিবী

ভুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ ও কুকুর

আঙুলে  ক্ষমার চিহ্ন  মুছে  

সরে যাচ্ছেন ঈশ্বর






বিপন্নতা


সব বিপন্নতার কাছে নতিস্বীকারের বিকেল থাকে

প্রতিটি  ঘুমের পাশে পাথরের চোখ যেখানে দৃশ্যেরা অনাথ

ভুলের থেকেই কান্নার সারাংশে

মিশে যায় জল


পাশফেরা ভোরের চিঠিতে

অদৃশ্য ঠোঁটের দাগ

মনে করিয়ে দ্যায় ভুলের ক্ষেত্রফল


 সকালের অনুপ্রবেশে কোনো

মেধাবী তর্জমা পড়ে নেই

পাখিনামের চর্যাপদগুলি আলো মাখে

আকাশি কলোনিতে




নতিস্বীকার


একটা  নতিস্বীকারের বিকেলে জড়িয়ে যায় ভাঙচুরের  অনাবশ্যক।ঝিমোনো দুপুরের গা বেয়ে পিছলে যায় রোদ। আহত বিকেলের গালে ধুলোর তামাসা।

সব ভুল থেকেই বেড়ে ওঠে  অতিক্রমের ক্রিয়াপদ।

একটি জড়তার সকাল সাজি হাতে দাঁড়ালে 

ভাঙনের পরেও উপকথার চাঁদ ওঠে।

সব প্রতিফলিত আলো বিচ্ছুরিত হয়েও

জ্বলে ওঠে  না,

প্রতিসরণে ভূমিকা বদলে নেয়।

অন্ধকার কখনো  নদীর মতোই নিঃসারী

 হতে হতে ধুয়ে দেয় শোকের বিসর্গ।

 যৌথখামারে  উদারতার আসবাব ঝিকিয়ে ওঠে। 

 ভাঙা ডাকবাক্সের চর্যাপদ  ভুলিয়ে দেয় এই অনাবশ্যক  নতিস্বীকারের উপকথা।



মৃত উপলব্ধির ককটেল


এইসব ঝুরো ঝুরো বসন্তের কাছে 

কাগজের ডিঙা ভাসিয়েছি

বাদামের কোটরে ভালোবাসাবাসি শেষ হলে

ফিরে আসি নিরুত্তর আলোর কাছে যেখানে কোনো  সংগোপন নেই


এঁকে চলেছি শূন্যতার লাল ঘড়ি 

কাঁটারা স্বাধীন হলে বদলে নেবো বিকেলের  অনুশাসন


মেঘের সিলেবাসে চোখের কারাবাস

 মুছে গেলে,

সমস্ত অভিমান পেখম হয়ে যায়


না কোনো বিরহ নয় 

তোমার জন্য মোড়ক রেখেছি 

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন মৃত উপলব্ধির ককটেল

তোমার গ্লাসে বাসি মহুয়ার মূল্যবোধ ।


টোকো হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রের বিষণ্ণতায়

ডুবে আছে চামচের গলা

সাপার টেবিলে থমকে আছে ধর্মীয়  কেকের উল্লাস

একটি সৎ  কবিতার জন্য 

তোমার কলম কোনো আলোর 

কলোনিতে পা রাখে  না আর ।



দুর্যোগ কাটিয়ে


সব বন্দী আলো রোদ হয়ে ওঠার অপেক্ষায় 

করাত কলে কাটা পড়ছে 

পাখির পায়ের দাগ


 নামাজের রং মেখে এবার উঠে দাঁড়াবে

 ছেঁড়া  ছেঁড়া  সবুজ জনপদ


 ভাষ্যকার তৈরি করছে পরবর্তী 

ধারা বিবরণী

পাতায় পাতায় বিচ্ছেদ লিখে

উড়ে যাচ্ছে একদল মেঘ-তিতির


এখনো  গ্রিলের গায়ে লেগে থাকা 

বৃষ্টি ফোঁটা সাবালক হলো না বলে

জলাশয় হয়ে উঠছে ঘর




এভাবেই


এভাবেই বুঝি আসে

বীজ ফুঁড়ে  অঙ্কুর

মেঘ ভেঙে জল

জল সেঁচে জীবন


এভাবেই থাকে

ছায়ার মতো  স্পর্শ

উষ্ণতার নিরাময় 

ভালোবাসার ওম


এভাবেই নামে

দিনের শেষে সন্ধে

রাতের গায়ে জ্যোৎস্না

ঠোঁটের ওপর ঠোঁট 




আমাদের গ্রামদেশ


১.

একটা ভুল আঁকা রাস্তা পেরিয়ে

ডাকনামের ঘর

খসে পড়া  তারার গ্রাম

তিনপুরুষের প্রহর এঁকে দাঁড়িয়ে 


পূর্ণিমার  আলোয় একা সদর

অপেক্ষা নামিয়ে ঠায়  

জমিও ভুখা কতকাল 

জানে না আজকের ভূমিকা 


২.

মাঝে মাঝে অতিথির মতো

দিনের আলো এসে

তুলে নেয় ঘুমের আতশ

চোখের ভেতর চোখ মেলে দেখি

 আমার গ্রামদেশ

উড়ে যাচ্ছে সারসের ডানায়


৩.

তর্পন জানে মুছে রাখা আয়ুর কৌলিন্য 

তিথি লুকিয়ে  রাখা আতাগাছে জন্মঋণের দাগ

একবুক মন কেমনে ডুবে থাকে ভুলের একতারা

পায়ে পায়ে বিঁধে যায় পুনরায়ের পথ

পিতৃপুরুষের আলো অধিকারে

স্বাগত মেলে দেয়



লিখে ফেলছি তোমাকে


এভাবেই শব্দ সাজিয়ে সাজিয়ে

                  লিখে ফেলছি তোমাকে

 দূরের পিঠে দূরত্বের আড়াল


চোখের ওপর নামিয়ে রাখছি

                        হয়তো লেখা নদী

 সবুজ নাকছবির গ্রাম


আর,

 বুকের মধ্যে চিনচিনে শিষ 

                   ভেঙে দিচ্ছে দেয়াল



রাতের ভূগোল


এইসব অনিবার্য  ক্ষত ভুলে

নতুন কোন সূত্র খুঁজে ফেলা দরকার

জল কিংবা  চোখের মতো 

 সহজ কোনো  উদারতা  দিয়ে 

 হেঁটে যাবার প্রয়াস 


ধারাবাহিক  ব্যর্থ ঘুমের  দেওয়ালে

এবরো খেবড়ো  আমারই মুখভাঁজ

পৃথিবীকে উল্টে দেখার ইচ্ছেয়

আরো একবার সূর্যমন্ত্রের আহ্বান


রোদের নামতা মোড়া তোমার বুকপকেট 

হলুদ শার্টের ইশারায় নাভিঘাম বেড়ে যায়

রাতের ভূগোল খুলে দেখি  

আমার সংক্ষিপ্ত  জুড়ে একটাই স্থলভাগ

যেখানে শুধুই  তুমি শব্দের সর্বনাম 




পরমাণু বন্ধন


এভাবেই  জল আঁকে মেঘ

দিন  থেকে আরো দিনের প্রত্যয়ে

চোখ থেকে আরো  কোন

 চোখের নাব্যতায়


ঝাপসা মনখারাপের  ফ্রেস্কোয় 

উপমা ছড়িয়ে যায় বৃষ্টির  অ্যালবাম

 কথার পোশাকে বকুল গন্ধ  

চোখে চোখে আঁকা স্নায়ু-রসায়ন


আরো প্রথা ভাঙা 

আরো  নরম সন্ধ্যার ঘর

তালিমহীন চোখ 

জল আনে দীঘি কেটে কেটে


যে দিকে ঠিকানারা কাঁটাতার আঁকে

সেখানে খেলা শুধু ফলাফলহীন

আড়ালে সম্মতি থাক সব বিনিময়


একটাই বায়ুঘর ধমনী-মোড়ক

স্নায়ুতে  নীল নীল মেখলা দুপুর 

নিষেধের গিঁট খুলে দিলে

অনুতে অনুতে বুঝি পরমাণু বন্ধন





Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন