আজ মহালয়া । পিতৃপক্ষের অবসান ঘটিয়ে দেবীপক্ষের শুরু হল। মহালয়ার মাধ্যমে দেবী দুর্গা আজ পা রেখেছেন মর্ত্যলোকে। অশুভ শক্তিকে বিনাশ করতে দেবতাদের তেজরশ্মি থেকে আবির্ভূত হয়েছিলেন অসুরবিনাশী দেবী দুর্গা। একই সঙ্গে শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্নের শুরুও আজ থেকে । আর এই শারদোৎসবের আনন্দযজ্ঞে মেতে উঠবে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেনির মানুষ ।
যদিও পুজোর বাজারে চলছে মন্দা । একদিকে মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত নিজভূমিতে বিদেশি হয়ে যাওয়ার ভয়ে । গ্রামের সহজ সরল মানুষগুলো আজ উদভ্রান্ত হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছে 'অস্বাস্থ্যকর রাজনীতি'র শিকার হয়ে । অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি, শিল্প, চাকরি সবই প্রতিকূল অবস্থায় । সব মিলিয়ে হয়তো কোনো অন্ধকারে সুখ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছি ।
রাজনৈতিক জাঁতাকলে পড়ে অনেক বুদ্ধিজীবি বুদ্ধি হারাচ্ছেন । এসব বুদ্ধিজীবিদের বুদ্ধি চোয়ালে বাসা বাঁধে না বলেই হয়তো এমন । আজ তথাকথিত সেইসব বুদ্ধিজীবিদের মেরুদন্ড ভাঙা ।
ইদানিং বাংলায় নানা ধরনের আন্দোলন লক্ষ্য করছি । "নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান" এই ঐক্যতার সুরে আমরা বিশ্বাসী । তারমধ্যে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন বলেন 'এক দেশ এক ভাষা, হিন্দিই বাঁধতে পারে সমগ্র দেশকে', স্বাভাবিকভাবেই সেটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় । কারণ শুধুমাত্র ভাষাকে কেন্দ্র করে অনেক আন্দোলন হয়েছে । তবে যাইহোক বাঙালি বিপন্ন হতে হতে বর্তমানে কি বাঙালি অস্তিত্ব সংকটে ? না, বাঙালি যুগে যুগে আন্দোলন করেছে ও করবেও । বাঙালির পেছনে কাঠি করলে বাঙালি তার প্রতিবাদ জানাতে পিছপা হবে না । জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ভাষা বাঙালি কখনো স্বীকার করেনি ভবিষ্যতে করবেও না । বাংলাই বাঙালির মাতৃভাষা । আর সেটা বোঝাতেই প্রান দিয়েছিল বরকত, সালাম, জব্বার কিম্বা কমলা ভট্টাচার্যের মতো বাংলা ভাষা প্রেমীরা । ইতিহাস তাদের অস্বীকার করে না । বাঙালি এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। তাই বাংলা ভাষার পরিধিও প্রসারিত হয়েছে। বাংলা ভাষায় এখন বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি লোক কথা বলে। ২০৫০ সাল নাগাদ কেবল ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সী বাংলা ভাষীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৩১ কোটি ৬০ লাখ। এই অনুমান পরিসংখ্যানবিদদের। বাংলায় সর্বস্তরের প্রয়োজনের মাধ্যম হিসেবে বাংলাকে ব্যবহার করতে না পারলে, বাংলা আমাদের মায়ের ভাষা, প্রানের ভাষা, শোষকের-শোষিতের ভাষা, প্রতিবাদের ভাষা এটা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয় ।
তবে বাংলাকে সঙ্গে রেখে অন্য ভাষা শিখতে বা জানতে আপত্তি নেই। বাংলাই হোক বাঙালির বলিষ্ঠ হাতিয়ার । সাহিত্য চর্চায় থাকুক নিরপেক্ষতা । ধর্ম-রাজনীতির উর্দ্ধে একাজ আমাদেরই করে যেতে হবে । বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব; শারোদোৎসব আনন্দে কাটুক সকলের ।
সম্পাদকীয় লিখেছেন জয়দেব বিশ্বাস
সম্পাদকীয় লেখাটা অনন্য।।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ আপনাকে
মুছুন