1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত


                    ভবেন গোঁসাই
                     — ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত 


আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে আছে যে কারণে সেটা এক কথায় বলতে গেলে ডঃ ভবেন গোসাইয়ের নামটা চলে আসে।আমার একটা স্টাইল আছে।এই স্টাইলটা যাদের সহ্য হয় না তাঁদের মধ্যে ডঃ ভবেন গোঁসাই অন্যতম। 



সীমানাগুলো ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে আমি নিজের চোখে দেখছি।তার সঙ্গে প্রচলিত ধারণাগুলো, বয়েস হতে থাকলে মোহগুলো একে একে কাটতে থাকে- অভিমান ও হালকা হয়ে যায় । সভ্যতার বয়েস বাড়ে, অনেক পরিবর্তন সাদা নজরেই ধরা পরে।

আজ সকাল থেকেই মাথাটা বেশ ভারী লাগছে; এমনিতে এসময়ে আমি উঠে পড়ি, ডাক বাংলোর পিচের রাস্তা বেঁকে পেছনে সার সার ঝাউ গাছের আড়ালে হারিয়ে গেছে; চাতালটাতে কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া ফুলের ছড়ানো আলপনা।

এলাকাটা সামান্য পাহাড়ি - উঁচু নিচু পথ বেয়ে সদরে গেছিলাম গতকাল।খোলা জিপ গাড়িতে পরতে পরতে ধুলোর আস্তরণে সমস্ত শরীর ঢাকা পড়ে গেছিল- ফিরে এসে অনেক রাতে স্নান করেছিলাম, হয়ত তাই সামান্য জ্বর এসেছিল।

তবুও সকালবেলায় এমন এক সূর্য উঠল যে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলাম অনেকদূর। আমার জীবনটা এলোমেলো হয়ে আছে যে কারণে সেটা এক কথায় বলতে গেলে ডঃ ভবেন গোসাইয়ের নামটা চলে আসে।

আমার একটা স্টাইল আছে। এই স্টাইলটা যাদের সহ্য হয় না তাঁদের মধ্যে ডঃ ভবেন গোঁসাই অন্যতম। উনিই বলেছিলেন একদা- আপনার কাজে কম্মে লেখা জোখায় একটা স্টাইল আছে। আমি ডঃ ভবেনের দীর্ঘ দিনের সহকারী। ভবেন জীবনে কোন সুযোগ হেলায় হারান নি। দিব্যি ম্যানেজ করে একাধিক বার বিদেশ গেছেন। তাঁর নানা ফাইফরমাশ খেটে দেওয়াটা আমার কাজ ছিল। তার ভিসা পাসপোর্ট ডলার কেনা সি অফ করা বিদেশ থেকে আসা নির্দেশ অনুযায়ী এখানে সামলানো। সবই আমাকে করতে হয়েছে।

আমার কাজ ছিল ডঃ ভবেনই যে ডঃ ভবেন সেটা লোককে বলা এবং তিনি কে তা বলা। তখন গলায় আইডেনটিটি ঝোলানোর চল ছিল না। আমি ছিলাম তাঁর আইডেনটিটি কার্ড। তাকে আমি স্যার বলতাম।

এভাবে ক্রমশ স্যারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ল। সেই সুবাদে ওঁর কাছে যাবার সুযোগ হ’ল। আমার নিজের কাজের ফাঁকে ফাঁকে ডঃ ভবেনকে সহায়তা করা ছিল আমার কাজ। আমার স্বভাব বরাবরই মানুষকে সাহায্য করা। অবশ্যই নিজের ক্ষতি না করে। আর এ তো বস বলে কথা।

কিন্তু একেকটা মানুষ এমন থাকে তোমার হাত থেকে খাবার খেয়ে তোমার হাতেই কামড়ে দেবে। ভবেন স্যারও তাই। আমাকে যত ভাবে পারা যায় খাটিয়ে নিয়ে তারপর আমাকেই চিনতে পারছেন না। চিনতে চাইছেন না আজকাল। গতকাল তার ঘরে যখন ঢুকলাম তখন তিনি একটা চিরুনি দিয়ে টাক মাথাটা আঁচড়ানো চেষ্টা করছিলেন। আমাকে দেখে ভীষণ ক্ষেপে গেলেন। আমি সবিনয়ে বলার চেষ্টা করলাম আমি ঘোড়ার পেছনে দাঁড়াই না চাট খাবার ভয়ে। তবে আমার ছুটির দরখাস্তটা আর ইনক্রিমেন্টের অর্ডারটা যদি সাহেব একটু অনুমোদন করে দেন তবে দুশ্চিন্তা থেকে বাঁচি।

আগুনে যেন ঘি পড়ল। ভবেন স্যার তুবড়ি ছোটালেন আমার মতো অপদার্থ আর অকর্মন্য তিনি জীবনে দেখেন নি। প্রায় ঘর থেকে খেদিয়ে বের করে দিলেন। এমনকি আমার কাজ কম্মে, লেখা জোখায় যে একটা স্টাইল আছে যেটা একদা প্রশংসা করেছিলেন সেটাও ভুলে গেলেন।

আমি ধাঁধায় পড়ে গেলাম। কোনটা সঠিক? আজ আমার নিন্দে সঠিক হলে সেদিনের প্রশংসাটা ভুল। অথবা প্রশংসা মেকি নিন্দেটাই সঠিক।

আমি কোন কথা না বলে ভবেনের দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকালাম। ওঁর বিশাল বড় ঘরটা সুন্দর করে সাজানো। একপাশে লেদারের সোফা, ছোট ফ্রিজ, সেলার, সেন্টার টেবিল, ডেস্কটপ, বিয়াল্লিশিঞ্চি টিভি। অনেক হয়েছে মাতব্বরি, আজ একটু কড়কাই।

বললাম, স্যার আপনি উত্তেজিত হবেন না। আমি বেশি সময় নেবো না। দাঁড়ান দরজাটা বন্ধ করে আসি। আপনি ততক্ষণ লাল আলোটা জ্বালিয়ে দিন। আমি চাই না কেউ বিরক্ত করুক।
বলেই আমি ঘরের দরজাটায় ছিটকিনি লাগিয়ে দিলাম। ভবেন তখন হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে আছেন। আমি জানি কোথায় সুইচ। লাল আলোটা জ্বালিয়ে দিলাম। ভবেনের পিঠে হাত দিয়ে বললাম, চল দোস্ত, সোফাতে একটু বসি। ওঁর ভ্যাবাচ্যাকা ভাবটা বাড়তেই থাকছে। যে কোন সময়ে ফাটতে পারে। আমার হাতে সময় বেশি নেই। হ্যাঁচকা টান মেরে ভবেনকে সোফায় বসিয়ে দিলাম। সেন্টার টেবিলে ফলের ঝুড়ি। আপেল কাটার ছুরিটা সোজা বসিয়ে দিলাম লেদার সোফায়। এক টান মেরে ফেড়ে দিলাম অনেকটা।

বললাম, তোমার অত্যাচার অনেক সহ্য করেছি। আজ সোফাটার যে দশা করলাম পর দিন তোমারও একই অবস্থা হবে।
ভবেনের মুখটা তখন ফ্যাকাশে হয়ে এছে। গলা দিয়ে স্বর বেরোচ্ছে না। ফ্যাসফ্যাসে গলায় কোন মতে বলল, আপনি কি চাইছেন, বলুন। আমি সব মানতে রাজি আছি।
আমি বললাম, আমার ছুটির দরখাস্তটা স্যাংশান করে দাও। দুই, ইনক্রিমেন্টের অর্ডারটা সই করে দাও। তিন, তোমার এই মাতব্বরি বন্ধ কর। যার যেটা পাওনা হবে সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেবে। আজকের মধ্যে সবার সব বকেয়াগুলো ছেড়ে দাও।


Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন