উলূপী কথা
—শকুন্তলা সান্যাল
পলিমাটির তটে জীবন বেঁধে বসেছি ।নৈঃশব্দ্যে চোখ খুলছে একটা দুটো তৃণ ।তাদের নাম দিয়েছি সভ্যতার শুরু ।কয়েকটা কেঁচো সমাজসেবীর মতো।হাতের চেটোর ওপর দিয়ে যাচ্ছে,বুঝছে শীতল নই।নদী থেকে উঠে সদ্য বসেছি।আমার বসন থেকে বাষ্প উঠছে আবহমানের ।কিছু দূরে ঝাউবন, হাতছানি দিচ্ছে ।কিন্তু জীবনে মোহনা আসতে বেশ কিছু দেরী ।কতদিন শরীর থেকে মন খুলে দাপিয়ে বেড়িয়েছি সমুদ্র জলে।কতদিন মন বেঁধে ডুব দিয়েছি পুকুরে ।পুকুর আমার আপন শরীর ।সেখানে গেঁড়ি গুগলির মতো বেড়ে ওঠে জ্ঞান ।কেউ জানতে পারে না ।শুধু প্রতিবাদী কাঁকড়ার দাঁড়া দিয়ে যখন চেপে ধরি প্রতিকূলতা, কেউ হয়তো বা বুঝেছে তখন কর্কশ ভাবের আমায়!
নদী থেকে উঠে আকণ্ঠ প্রেম নিয়ে বসে আছি ।প্রেমে বসেছে মন।আর শরীরে বসেছে চেতনা ।আমার মাথা রমন করছে প্রেম ।শীৎকারে আচ্ছন্ন হচ্ছে শরীর ।অথচ কেউ কোথাও নেই ।আমি জানি আমার এই প্রেম কিছু পড়েই কোনো দোসর না পেয়ে পাল্টে যাবে স্নেহে ।স্নেহ কি প্রেম না?রমন নিষিক্ত ডিম্বাণু তো প্রেমের ক্ষরণেই।প্রেম তো আমারি অন্তর নিঃসৃত ।রজ্জুতে সর্পভ্রম করে করে বেঁচে থাকে যে প্রেম, সে তো একদিন সরলীকরণে আমাতেই জন্মেছে ।প্রেমের জন্মান্তর আছে মৃত্যু না।
সেই যে একদিন কবে ,সুপর্ণকে দেখে উলূপীতে ক্ষরণ হয়েছিল প্রেমের ।নিশ্চয়ই সে অন্তরের ছবি অর্জুন পুরুষের ছিলোনা ।তাহলে অতো মূর্ছনায় মরতোনা উলূপী ।কিম্বা যদি দ্রূপদ নন্দনার মতো অর্জুনেই জন্ম নিত তার প্রেম,অমন স্নেহে আদ্র মাতৃ রসে সজাগ হতো কি সে? শুধু ইরাবাণ নয়,স্বামী সহবাসিনী চিত্রাঙ্গদা তার স্নেহবন্দী হতো না ।বব্রূবাহন মা ডাকতনা তাকে ।
তবু প্রেম যে প্রেমই হয় ।শরীর হয় শরীর ।মৃত্যু হীন প্রেম আর মৃত্যু ময় শরীর ।যতদিন মৃত কোষ ততদিন নব কোষ।যতদিন প্রেম ততদিন শরীর।যদি প্রেম হীন শরীর সংসার করে ,নিশ্চয়ই মাথায় বাড়বে শয়তান।যদি পছন্দ পারস্পরিক না হলো, তখনও বাঁচে শয়তান। উলূপী-দেবর তেমনি তো ছিলো !
কত ছলনায় রমনী সম্মান বাঁচায়।ছলনা ফুরালে পিঠ পেতে দেয় অত্যাচারে। প্রেম ভোলে না ।বেঁচে থাকে তার যাবতীয় প্রেম । সত্যাতীতের সুর সুন্দরের মূর্ছনার মতো অহরহ অমোঘ তীক্ষ্ম ।