কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি
মুকুন্দ চক্রবর্তী
কবি পরিচিতি:
কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের অন্যতম একজন কবি। কবি নিজের সম্পর্কে যে পরিচয় দিয়েছেন তা থেকে জানা যায় কবির উপাধি ছিল কবিকঙ্কন এবং কবির নাম হল মুকুন্দ এবং চক্রবর্তী ছিল কবির বংশগত পদবি।
চন্ডীমঙ্গলের পুঁথি হতে জানা যায় কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বর্ধমানের দামিন্যা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ধমানের রত্না নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত এই গ্রাম যেখানে কবির পূর্বপুরুষের বসবাস ছিল। কবির মায়ের নাম ছিল দৈবকি এবং পিতার নাম হৃদয় মিশ্র।
কবির আত্মপরিচয় অংশ থেকে জানা যায় মানসিংহ যখন উড়িষ্যা ও বাংলার সুবেদার, সেই সময় মামুদ শরীফ ছিলেন বাংলার ডিহিদার। মামুদ শরীফ এর অত্যাচারে দামুন্যাবাসীরা যেমন গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান, কবিও তেমন তার পুত্র এবং ভাইকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যান। যাওয়ার পথে দেবী চণ্ডী কবিকে স্বপ্নে তাঁর মাহাত্ম্য বর্ণনা করেন। শিলাবতী নদী পেরিয়ে কবি পৌঁছে যান আরড়ায়। আরড়া রাজ বাঁকুড়া রায় কবি মুকুন্দরাম এর পাণ্ডিত্যে খুশি হন। রাজা বাঁকুড়া রায় তার নিজ পুত্র রঘুনাথ এর পঠন-পাঠনের কাজে কবিকে নিযুক্ত করে দেন। পরবর্তীতে যখন কবির ছাত্র রঘুনাথ রাজা হন তখন তার অনুরোধেই কবি "চন্ডীমঙ্গল" কাব্য রচনা শুরু করেন। কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত চন্ডিকা মঙ্গলকাব্যটির একাধিক অন্য নামও পাওয়া যায়। যেমন 'অম্বিকামঙ্গল', 'অভয়ামঙ্গল', 'কবিকঙ্কণ চণ্ডী ইত্যাদি।
- কবিতার উৎস :
কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর 'চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের আখেটিক খন্ড' থেকে আলোচ্য কাব্যাংশটি গৃহীত হয়েছে।
- বিষয় সংক্ষেপ :
কলিঙ্গদেশের আকাশ ঘন মেঘাচ্ছন্ন। এতটাই গাঢ় অন্ধকার যে কলিঙ্গ অধিবাসীরা নিজেদের চেহারা দেখতে পাচ্ছে না। উত্তর-পূর্ব কোণে ঘনঘন বিদ্যুতের ঝলকানি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। উত্তরাংশের প্রবল বাতাসে সুদূর দিগন্ত থেকে মেঘের গুরুগম্ভীর আওয়াজ শুনা যায়। কালো মেঘে মুহূর্তের মধ্যেই আকাশ ছেয়ে যায় এবং প্রবল মুষলধারায় বৃষ্টি নেমে আসে। সমগ্র কলিঙ্গদেশ প্রবল মেঘের গর্জনে কেঁপে ওঠে। ভয়, আশঙ্কায় প্রজারা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে থাকে। নির্মল প্রকৃতি ধুলোতে ঢেকে যায়। চাষীদের ক্ষেতের ফসল নষ্ট হয়। মনে হয় যেন আটটি বিশাল হাতি ভাসিয়ে দিতে চায় সমগ্র কলিঙ্গ দেশকে। বর্ষার এতটাই বেগ , যা দেখে মনে হয় কোন এক বিশাল হাতির দল তাদের শুঁড় দিয়ে জল বর্ষণ করে চলেছে। যেহেতু পৃথিবী জলমগ্ন হয়ে পড়েছে তাই স্থল-জলের সীমারেখা মিলে মিশে এক হয়ে গেছে। মেঘের এতটাই গর্জন যে একে অপরের কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না। রাত আর দিনের পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে না। প্রজারা ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করে তাদের এই বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য। সাপেরা তাদের আশ্রয় হারিয়ে জলে ভাসতে থাকে প্রবল বৃষ্টির কারণে। সাত দিন যে প্রবল বৃষ্টি হয় তাদের ঘর বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায় এবং চাষ করা শস্যের প্রবল ক্ষয়ক্ষতি হয়। ভাদ্র মাসের পাকা তাল যেমন বৃহদাকারের সেরকম এক একটা শিল ঘরের চাল ভেদ করে মানুষের ঘরের মেঝেতে পড়তে থাকে। নদ নদীর জল প্রচন্ড বেগে নগরে প্রবেশ করে এবং ঘরবাড়ি সব ভেঙেচুরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। শ্রীকবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তাঁর 'অম্বিকামঙ্গল'কাব্যে এই ধ্বংসের কাহিনী সঙ্গীত আকারে শুনিয়েছেন ।
১. ঠিক উত্তরটি বেছে নিয়ে লেখো: ১×৩=৩
১.১ অম্বিকামঙ্গল গান শ্রী কবিকঙ্কন। 'অম্বিকা' হলেন–
(ক) দেবী লক্ষলক্ষী (খ)দেবীমনসা (গ) দেবী চন্ডী (ঘ)দেবীশেতলা
উত্তর : দেবী চন্ডী
১.২ 'সঘনে চিকুর পড়ে ব্যঙ্গ – তড়কা বাজ' । এক্ষেত্রে 'চিকুর' শব্দের অর্থ —
(ক) চুল (খ) আকাশ (গ) বিদ্যুৎ (ঘ) বৃষ্টি
উত্তর : বিদ্যুৎ
১.৩ যার নাম স্মরণ করলে বজ্রপাত বন্ধ হয় বলে মানুষের বিশ্বাস, তিনি হলেন—
(ক) ব্যাসদেব (খ) জৈমিনি
(গ) দেবী চন্ডী (ঘ) গজরাজ
উত্তর : জৈমিনি
২. সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর: প্রশ্নমান ১
২.১ ঈশান বলতে কোন দিক বোঝায়?
উত্তর: উত্তর-পুর্ব দিককে বোঝায়।
২.২ কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?
উত্তর: মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর লেখা চন্ডীমঙ্গল কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।
২.৩ চারিদিকে অন্ধকার হয়ে যাওয়ার কারন কি?
উত্তর: আকাশ মেঘে ঢেকে যাওয়ার কারনে চারিদিকে অন্ধকার হয়েছে।
২.৪ হরিত শব্দটির অর্থ কি?
উত্তর: সবুজ
২.৫ মহি শব্দের প্রতিশব্দ লেখ।
উত্তর: ধরা, পৃথিবী
২.৫ সোঙরে শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: স্মরণ করা
২.৬ কলিঙ্গ দেশের লোক কাকে স্মরণ করে?
উত্তর: কলিঙ্গ দেশের লোক জৈমিনি মুনিকে স্মরণ করে।
২.৭ কলিঙ্গবাসীর জৈমিনিকে স্মরন করার কারণ কি?
উত্তর: জৈমিনি মুনি বজ্রপাত নিবারণ করতে পারেন তাই বজ্রাঘাতের থেকে রক্ষা পেতে তারা তাকে স্মরণ করেছে।
২. ৮ ‘বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়’- রড় শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: 'রড়' শব্দের অর্থ হল দৌড়ানো
২.৯ চণ্ডীর আদেশ কে পেয়েছিলেন?
উত্তর: বীর হনুমান চণ্ডীর আদেশ পেয়েছিলেন।
২.১০ চণ্ডী হনুমানকে কি আদেশ দিয়েছিলেন?
উত্তর: চণ্ডী হনুমানকে মঠ-অট্টালিকা ভাঙ্গার আদেশ দিয়েছিলেন।
২.১১ আছুক শব্দের অর্থ কি?
উত্তর: আছুক শব্দের অর্থ থাকুক।
২.১১ কবিতায় শিল পরাকে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?
উত্তর: কবিতায় শিল পরাকে ভাদ্র মাসের তাল পড়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
২.১২ কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী কোন সময়ের মানুষ?
উত্তর: ষোড়শ শতাব্দীর।
২.১৩ কারা ধুলায় আচ্ছাদিত হয়েছিল?
উত্তর: সবুজ মাঠের প্রান্তর গাছপালা।
২.১৪ জৈমিনি কে?
উত্তর: জৈমিনি একজন বাকসিদ্ধ ঋষি, কথিত আছে যে এনার নাম স্মরণ করলে বজ্রপাত বন্ধ হয়।
৩. কমবেশি ২০টি শব্দের উত্তর লেখো : ১×৩=৩
৩.১ 'দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার'। – কেন এমন পরিস্থিতি হয়েছিল ?
উত্তর : কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত "কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি" কবিতায় কলিঙ্গদেশের আকাশ ঘন কালো মেঘে আবৃত হয়ে যাওয়ায় দিনের বেলাতেই যেন রাতের আঁধার নেমে আসে, যার ফলে প্রজারা নিজেদের অঙ্গ দেখতে পায় না ।
৩.২ 'বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়।।' – প্রজারা কোন বিপাকে পড়েছিল ?
উত্তর : কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত "কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি" কবিতায় কলিঙ্গদেশে প্রচন্ড ঝড়ের দাপটে প্রজারা বিপাকে পড়ে ছিল এবং আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে প্রাণ রক্ষার্থে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড় ("রড়" শব্দের অর্থ হলো "দৌড়" বা "ছুট") ।
৩.৩ কলিঙ্গদেশে একটানা কতদিন বৃষ্টি চলেছিল ?
উত্তর : কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত "কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি" কবিতায় কলিঙ্গদেশে এক টানা সাতদিন ধরে বৃষ্টি চলেছিল ।
৪. প্রসঙ্গ নির্দেশসহ কম-বেশি ৬০টি শব্দে উত্তর লেখো : ৩×৩=৯
৪.১ 'চারি মেঘে জল দেয় অষ্ট গজরাজ'। – চারিমেঘ বলতে কী বোঝো ? 'অষ্ট গজরাজ'-এর পৌরাণিক অনুষঙ্গটি কী ?
উত্তর : কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত "কলিঙ্গদেশের ঝড়-বৃষ্টি" পদ্যাংশ চার প্রকার মেঘ জল দেয় । পুরান মতে সেই চার প্রকার মেঘ হলো - সংবর্ত, আবর্ত, পুষ্কর ও দ্রোণ ।
পৌরাণিক মতে উক্ত চার রকম মেঘের বাহন হল অষ্ট গজরাজ তথা ঐরাবত, পুণ্ডরীক, বামন, কুমুদ, অজ্ঞান, পুষ্পদন্ত, সার্বভৌম ও সুপ্রতীক । এরা দিকগজ নামে পরিচিত । কবিতা অনুসারে বলা যায় ঐ আটটি হাতি চার রকম মেঘের সাহায্যে কলিঙ্গদেশে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায় । ফলে সমগ্র কলিঙ্গদেশ জলমগ্ন হয়ে পড়ে ।
৪.২ 'ভাদ্রপদ মাসে যেন পড়ে থাকা তাল'। –কোন প্রসঙ্গে উদ্ধৃতিটির অবতারণা করা হয়েছে ?
উত্তর : প্রশ্নধৃত অংশটি কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর "কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি" পদ্যাংশ থেকে সংগৃহীত হয়েছে ।
কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত "কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি" কাব্যাংশে কলিঙ্গদেশে যে ভয়াবহ ঝড় বৃষ্টি হয়েছিল তার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে । আকাশ কালো করা বিপুল মেঘরাশির বর্ষণে প্লাবন সৃষ্টি হয় কলিঙ্গদেশে । টানা সাত দিনের অবিরাম বৃষ্টিপাতের সঙ্গে নিরন্তর শিল পড়তে শুরু করে । ভাদ্র মাসে তাল পেকে যেমন গাছ থেকে পড়ে যায় ঠিক তেমনি ভাবে অত্যন্ত বড় আকারের শিল ঘরের চাল ভেদ করে মেঝেতে পড়ে প্রজাদের ঘরবাড়ি বিনষ্ট করে দেয় ।
৪.৩ 'চণ্ডীর আদেশ পান বীর হনুমান'। – চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান কী করেছিল ?
উত্তর : উদ্ধৃত অংশটি কবিকঙ্কন মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত "কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি" পদ্যাংশ থেকে সংগৃহীত হয়েছে ।
দেবী চণ্ডী বীর হনুমানকে কলিঙ্গদেশকে বিধ্বস্ত করার আদেশ দিয়েছিলেন । দেবী চণ্ডীর মায়ায় কলিঙ্গদেশের ওপর নেমে এসেছিল ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগ । অবিরাম সাতদিন বৃষ্টির ফলে কলিঙ্গদেশ জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল তার উপরে দেবীর আদেশে বীর হনুমান কলিঙ্গের ধ্বংস সাধনে মগ্ন হয়েছিল । বীর হনুমান সে দেশের সকল মঠ, মন্দির ভেঙে চুরমার করতে থাকেন । হনুমানের কীর্তিকলাপের জন্য সমস্ত মন্দির খেলনার মতো গুঁড়িয়ে যেতে থাকে ।
৪.৪ ‘দেখিতে না পায় কেহ অঙ্গ আপনার।
– কেন এমন পরিস্থিতি হয়েছিল?
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কাব্যাংশে আমরা দেখি যে দেবী চন্ডীর আদেশে কলিঙ্গ দেশে প্রবল ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে।চারিদিকের আকাশ মেঘে আচ্ছন্ন হওয়ায় সমগ্র কলিঙ্গদেশ অন্ধকারে ঢাকা পড়ে, ফলে কলিঙ্গবাসী নিজেদের অঙ্গ দেখতে পাচ্ছে না।
৪.৫ ‘বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়।।'
– প্রজারা কোন বিপাকে পড়েছিল ?
উত্তর: মা চন্ডীর আদেশে কলিংদেশে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়। প্রবল বজ্রপাত ও মুষল্ধারে বৃষ্টি পরতেই থাকে,নদীতে বান ডাকে এবং এই দুর্যোগের ফলে ঘর বাড়ি দুড়মুড় শব্দে ভেঙ্গে পড়তে থাকে। এখানে এই বিপাকের কথাই বলা হয়েছে।
৪.৬ “অম্বিকামঙ্গল গান শ্রী কবি কঙ্কণ “ – ‘অম্বিকামঙ্গল’ ও ‘শ্রী কবি কঙ্কণের পরিচয় দাও।
উত্তর: উদ্ধৃতাংশে ‘অম্বিকামঙ্গল’ বলতে কবি মুকুন্দ চক্রবর্তীর লেখা ‘চন্ডীমঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থের কথাই বলা হয়েছে। কবির অপর নাম হল কবি কঙ্কণ। আসলে শিশুকাল থেকেই কবি মুকুন্দরাম লেখাপড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেবতাদের নিত্য সেবা করতেন এবং নিজের রচনা করা পদ্য গান হিসাবে গাইতেন। তাই এখানে কবি বলেছেন তিনি অম্বিকামঙ্গলের গান গাইছেন।
৪.৭ ধুলায় আচ্ছাদিত হল যে ছিল হরিত/ উলটিয়া পড়ে শস্য প্রজা চমকিত– উদ্ধৃতাংশটির অর্থ লেখ ।
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতার অংশ।
গাছপালার সাধারণ রং হল সবুজ। কিন্তু মা চন্ডীর আদেশে কলিঙ্গ দেশে যে প্রবল ঝড় উঠেছিল তার ফলে সবুজ রঙের সকল উদ্ভিত ধূলোতে ঢাকা পড়েছে। শুধু তাই নয়,মাঠে যত শষ্য সঞ্চিত ছিল সেগুলি ঝড়ের প্রভাবে উল্টে পরেছে। ঝড়ের এই বিধ্বংসী রূপ দেখেই কলিঙ্গবাসী মকে উঠেছে।
৪.৮ “সঘনে চিকুর পাড়ে বেঙ তড়কা বাজ”- বাক্যটির অর্থ লেখ।
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতার অংশ।
আমরা জানি ব্যাঙ লাফিয়ে লাফিয়ে একস্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করে। কবি এখানে ঘন ঘন বাজ পড়াকে ব্যাঙ্গের লাফের সঙ্গে তুলনা করেছেন। কবি বলতে চেয়েছেন ব্যাঙ যেভাবে লাফায় তেমন ভাবেই লাফিয়ে লাফিয়ে মেঘ থেকে ঘন ঘন বাজ পড়ছে। আর চমকে ওঠা বিদ্যুৎ যেন কালো চুলের মাঝে ফুটে ওঠা সিঁথি।
৪.৯ “করিকর সমান বরিষে জলধারা/ জল মাহি একাকার পথ হইল হারা”- বাক্যটির তাতপর্য্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর: উদ্ধৃত অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গ দেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতার অংশ।
'করি' অর্থাৎ হাতি এবং 'করিকর' কথাটির অর্থ হাতির শুঁড়। হাতি যেভাবে তার শুঁড়ের সাহায্যে জল বর্ষন করে তেমন ভাবে আকাশ থেকে বিশাল ধারায় বর্ষন হয়ে চলেছে।
'মহী' কথার অর্থ পৃথিবী। অর্থাৎ প্রচন্ড বৃষ্টির দাপটে সারা পৃথিবী যেন জলে ডুবে গেছে। তাই আলাদা করে আর কোনো পথের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
৫. কম-বেশি ১৫০ শব্দে নীচের প্রশ্নটির উত্তর নিজের ভাষায় লেখো : ৫
৫.১ 'কলিঙ্গদেশে ঝড়-বৃষ্টি' কাব্যাংশে অনুসরণে প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত জনজীবনের ছবি কিভাবে ফুটে উঠেছে, তা আলোচনা করো ।
উত্তর : কবি মুকুন্দ চক্রবর্তী রচিত চন্ডীমঙ্গল কাব্যের অন্তর্গত কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি কাব্যাংশটি দেখা যায় কলিঙ্গে প্রবল প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসে । কলিঙ্গদেশের আকাশে ঘন মেঘের সমাবেশ ঘটে । দেবীর আদেশের হঠাৎই ঈশান কোণে মেঘ জমা হয় । ঘন ঘন বিদ্যুতের ঝলকানি সহ মুষলধারায় বৃষ্টিপাত শুরু হয় । বিপদের আশঙ্কায় প্রজারা ঘর ছেড়ে দ্রুত পালাতে থাকে । প্রবল ঝড়ের দাপটে সবুজ গাছপালা এবং শস্যক্ষেত নষ্ট হয়ে যায় । প্রবল বর্ষণে কলিঙ্গদেশ জলমগ্ন হয়ে পড়ে । আটটি দিকহস্তি যেন বৃষ্টি ধারায় সব ভাসিয়ে নিয়ে যেতে চায় । বিপদ থেকে রক্ষা পেতে ভীত প্রজারা ঋষি জৈমিনিকে স্মরণ করতে থাকে । সাতদিন ধরে টানা বৃষ্টিপাতের ফলে প্লাবিত হওয়ায় কৃষিকাজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ঘরবাড়িও নষ্ট হয়ে যায় । বড় আকারের শীল ভাদ্র মাসের তালের মত ঘরের চাল ভেদ করে পড়তে থাকে । দেবী চণ্ডীর আদেশে বীর হনুমান ঝড়ের বেশে তান্ডব চালিয়ে মঠ-মন্দির-অট্টালিকা ধ্বংস করে প্রজাদের আরো বিপদ গ্রস্থ করে তোলেন । দেবী চণ্ডীর আদেশে সৃষ্ট এই ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে অসহায় ভীত প্রজারা বিপদের আশঙ্কায় অবশেষে কলিঙ্গ ত্যাগ করতে বাধ্য হয় ।
৫.২ বিপাকে ভবন ছাড়ি প্রজা দিল রড়’- কোথাকার প্রজার কথা বলা হয়েছে? বিপাকের স্বরূপ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : উদ্ধৃত অংশটি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী রচিত ‘কলিঙ্গদেশে ঝড় বৃষ্টি’ কবিতার অংশ। এখানে কলিঙ্গদেশের প্রজাদের কথা বলা হয়েছে।
মা চণ্ডীর আদেশে দেবতা ইন্দ্র আকাশে ঘন কালো মেঘের সৃষ্টি করেন এবং প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি সহ বজ্রপাত ঘটান। জলে কলিঙ্গ প্লাবিত হয়ে পথঘাট কিছুই বোঝা যায় না।দিন রাতের মধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া যায় না। ঘন অন্ধকারের মাঝে প্রজারা কেউ কারো অঙ্গ দেখতে পায় না, প্রবল বজ্রপাতে কেউ কারোর কথা শুনতে পায় না। চাষের খেতের ফসল সব পচন ধরে।পর্বত সমান উঁচু ঢেউগুলি সব ঘরবাড়ি অট্টালিকা দুমড়ে-মুছড়ে ফেলে দেয়। এই বিপাকের ফলে প্রজারা তাদের ঘরবাড়ি ফেলে পলায়ন করেছে।