1 / 7
2 / 7
3 / 7
4 / 7
5 / 7
6 / 7
7 / 7

অঞ্জলি দে নন্দী : সাহিত্য চেতনা



 সামনের ফ্ল্যাটের কাহিনী

 •  অঞ্জলি দে নন্দী

***


বৃদ্ধা পাকিস্তানের পাঞ্জাবের। বিয়ের পর দিল্লীতে। ওনার স্বামীর জন্ম ও বাস এখানেই। উনিও তাই এখনও পর্যন্ত দিল্লীতেই। উনি ফ্যামিলির সঙ্গে আমার সামনের ফ্ল্যাটে থাকেন। বয়স তিরানোব্বই।  দিব্বি শক্ত আছেন। দুপুরে নাতীরা স্কুল থেকে ফিরলে গরম গরম আলু পরোটা ও ডাল মাখানী রান্না করে খাওয়ান ও খান। 

       আবার সৎ সঙ্গের মহল্লায় গিয়ে গান, বাজনাতেও যোগ দেন। এখান থেকে - তিন তলা থেকে নেমে, তারপর পনেরো মিনিটের পথ হেঁটে - তারপর ঐ মহল্লায় যান- আবার কয়েক ঘণ্টা ওখানে কাটিয়ে - আবার এখানে ফেরেন। 

        আমার কাছে এসে বসে বসে গল্প করেন।

        নিত্য কাজের মেডটিকেও ওই পরোটা ইত্যাদি খাওয়ান। আমাদের পড়শীদেরও দেন। নিজেই সব্জী কাটেন। মশলা বানান। ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি....

    ড্রেস একদম টিপটপ। কেশ সাদা ও কম হলেও পরিপাটি। হাতে ঘড়িটি বাঁধা। 

     প্রায়ই ঝগড়া করে সংসার থেকে বেরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওপরের ছাদে উঠে গিয়ে নিজের মনে বকতে থাকেন।

         ওনার বিয়ের পর তিন ছেলের জন্মের পর স্বামী মারা যান। স্বামীর সরকারী চাকরিটি করে ছেলেদের বড় করেন। উনি আমাকে তিনটি ডায়েরী দেখান। তিনটি তিনতলা বাড়ি তৈরীর খরচের নিখুঁত হিসেব। মহিলা যে কতটা মজবুত তা আমি আন্দাজ করি। কত তারিখে কত বস্তা সিমেন্ট কত দামে কোথা থেকে কিনে নিয়ে এসেছেন এরকম সব কিছু এতে নিজের হাতে লিখে রেখেছেন। এক অল্প বয়সেই বিধবার শক্তি। 

         বড় ছেলেটি বোবা। কারখানার শ্রমিক। বউটি লিভার খারাপ হয়ে অকালে মারা গেল। বাচ্চা হয় নি। বোবা স্বামীটি একাই তাই। ছোট ভাদ্র বউয়ের সংসারে আছে। মেজো ছেলে সেলসম্যান। বউটি মিনিষ্ট্রি অফ টেক্সটাইল এর উচ্চ পদস্থ অফিসার। শ্বাশুড়ি মেজোর সংসারে থাকে। ঠিক আমার সামনের ফ্ল্যাটে।

      ছোট ছেলেটিও সেলসম্যান। বউটি বুটিকের দোকান চালায় বাজারে। বেশ চলে। এরা মেজোর ওপরের ফ্ল্যাটে থাকে। বড় ভাসুর এদের কাছে থাকে। আর শ্বাশুড়ি মেজোর কাছে থাকে।

       মেজোর দু ছেলে। ছোটর এক ছেলে। সবাই স্কুলের ছাত্র। বউ ও ছেলেরা কেউই ঘরে থাকে না সকালে যায় ও রাতে ফেরে। নাতীদের দাদীমাই দেখভাল করেন। 

         মেজো বউ এক এক এক করে সব ক'টা বাড়িই বিক্রী করে দিয়ে নিজের নামে রূপীয়া ব্যাংকে জমা রেখেছে। কয়েক কোটি টাকা। আর এই দুটি টু বি এইচ কে ফ্ল্যাট কিনে দু বউ ও তাদের ফ্যামিলি আছে।

       উনি সব বৌকেই ছেলেদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে ঘরে এনেছেন। কিন্তু তার জন্য এই পাওনা। 

      এদিকে মেজো জা ছোটকে বঞ্চিতা করছে তাই নিজের স্বামী ও ছেলের জন্য ছোট বউটি মেজো ভাসুরকে উপপতি করে টেনে ধরে রেখে আপন জীবন বাঁচায়। আর ছোট ছেলেটি মুখে নেশার জিনিস রেখে রেখে ক্যান্সারের রোগে আক্রান্ত। মেজো দাদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেখে, অপারেশন করিয়ে সুস্থ করে এনেছে। দুটি চোয়াল তুলে ফেলে তাকে সুস্থ করা হয়েছে। তার কোন দাঁত ও মাড়ি নেই। এদিকে ছোট ভাই মেজো দাদার কাছ থেকে রূপীয়া, আসবাব পত্র ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি নিতেই থাকে। তার পত্নির সঙ্গে যে অবৈধ সম্পর্ক। আর ইনকামও কম। আর মেজোর ইনকাম কম। তাই সে তার স্ত্রীর কাছ থেকে মারধোর করে টাকা আদায় করে, এদেরকে দিচ্ছে।  মেজো বউ তো প্রচুর ইনকাম করে। টাকা মেরে নিয়েও রেখে দিয়েছে। এ খুব শিক্ষিতা। বর তো বার ক্লাস পাস। আর বউ এম. কম., এম. বি. এ. পাস। নিজের উপার্জন করা টাকা নিজের স্বামীকে দিয়ে, অন্যের বিছানায় শয়নে পাঠাতে হচ্ছে। তবে এও অলটারনেট রূপে আর এক রাজনৈতিক নেতাকে উপপতি করে রেখে দিয়েছে। তার দলের হয়ে কাজ করেও এর বিয়ে করা পতি বেশ ইনকাম করে। 

     আমি দেখি এ অফিস থেকে ফিরে সারা সংসারের বস্ত্র, মেশিনে কেচে শুকোতে দেয়। তারপর রান্না করে। অফিস থেকে ফেরার সময় বাজার হাতে করেই ফেরে। সকালেও সংসারের সবার খাবার রেঁধে ও সবাইকে খাইয়ে অফিস যায়। ছেলেদের স্কুলে পাঠায়। স্বামীকে (সেলসম্যান) অফিসে পাঠায়। নিজে যায়। মেড দুপুরে বর্তন ও ঘর সাফ করে। আমি বলি যে কুক বা ২৪ ঘন্টার মেড রাখলেই তো হয়। ও বলে যে না যে সব কাজ করতে ওর অসুবিধা হয় না। 

          এরপর শ্বাশুড়ীর তরফের প্রচুর আত্মীয় আসতেই থাকে। এক সপ্তাহের আগে কেউ যায় না। আর ওরা দল বেঁধে আসে। সবার খাতির যত্ন ও-ই করে। অফিস ও ঘর সমান তালে চালায়। নিজের বাবার বাড়ীর থেকেও আসে। 

         ও ওর বরের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে তাই আমি ওকে বলেছিলাম, " ট্রান্সফার নিয়ে, বর ও ছেলেদের নিয়ে দূরে চলে যা! " ও বলল, ' না, এখানেই থাকব। ' 

       আমার কাছে ওদের পরিবারের সদস্যরা সবাই যে যার মনের কথা বলে। আমি সব হজম করি। আর ঈশ্বরের কাছে বলি যে উনি যেন ওদেরকে সুখ দেন। এই ফ্যামিলির প্রত্যেকটি মানুষ আমাকে দেবীরূপে পূজো করে। আমি কিন্তু এর যোগ্যা নই ।

Joydeb Biswas

Poet Joydeb Biswas studied Bengali literature. In 2015, at the age of 22, he published 'Sahitya Chetona' magazine. Currently two editions of the magazine are published. One is the online version and the other is the printed version. He is the founder and editor of the two editions. facebook twitter youtube instagram whatsapp

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন